ঘৃতকুমারী উপকারিতা
অন্যান্য নাম: ঘৃতকাঞ্চন, কুমারী, তরুণী, ব্রহ্মঘ্নী, মুসাব্বার (আরবী) ইত্যাদি। স্থলদলা, গৃহকন্যা, ঘিউকুমারী,
উদ্ভিদের বর্ণনা: ঘৃতকুমারী একটি অতি পরিচিত ভেষজ উদ্ভিদ। একে সহজেই মাটির টবে জন্মানো যায়। এটি ছোট বীরুৎ জাতীয়, ২-৩ ফুট উঁচু। পাতা দীর্ঘ, মোটা ও রসালো, গোড়া হতে আগার দিকে ক্রমশ সরু, কিনার কন্টক সাদৃশ্য, পাতার নিচের দিক আংশিক বৃত্তাকার। পাতার অভ্যন্তরে ধক ধকে মাংসল পিচ্ছিল পদার্থ পূর্ণ। এই পদার্থের স্বাদ তিক্ত এবং গন্ধ উৎকট। এই পিচ্ছিল পদার্থই শুকিয়ে মুসাব্বরে পরিণত হয়। গাছ হতে একটি সরু মঞ্জরী দণ্ড বের হয় এবং তাতে হলুদ বা কমলা বর্ণের ফুল হয়। ফুল ট্রাইমেরাস ।
চিত্র: ঘৃতকুমারী |
সাধারণ গুণঃ তিক্তরস, শীতবীর্য, হজমকারক, বলবর্ধক, স্নিগ্ধকারক, কফনাশক, পিত্ত, কাশ, শ্বাস ও কুন্ঠনাশক, বিরেচক, ক্রিমিনাশক, ঋতুস্রাব কারক, অগ্ন্যুদ্দীপক, অর্শে হিতকর।
ব্যবহার্য অংশঃ পাতার অভ্যন্তরস্থ পিচ্ছিল জমাট বাঁধা পদার্থ ।
ব্যবহার: ঘৃতকুমারীর পাতার শাস বলবর্ধক ও শুক্রবর্ধক; যারা শুক্রমেহ রোগে ভোগেন তাঁদের জন্য এটি বিশেষ উপকারী। কৌথ দিলে বা প্রস্রাব করার সময় যাদের তরল শুক্রস্খলন হয় (এটাই শুক্রমেহ) তাঁদের ঘৃতকুমারীর শাঁস খাওয়া উচিত। প্রতিদিন সকালে পাঁচ গ্রাম আন্দাজ শাসের সাথে চিনি মিশিয়ে খেলে আশা করি এক সপ্তাহ কালের মধ্যেই এ রোগটি সেরে যাবে। সকাল-বিকাল দু'বেলা আন্দাজ পাঁচ গ্রাম শাঁস পানি মিশিয়ে কয়েকদিন খেলে ক্রিমি নষ্ট হয়ে যায়। ঘৃতকমারীর শাস পাঁচ গ্রাম পরিমাণ মাত্রায় একটু ঘি মিলিয়ে প্রত্যহ সকাল-বিকাল কিছুদিন খেলে পায়খানা পরিষ্কার হবে এবং অর্শে উপকার হবে।
যদি দেখা যায় সদ্যোজাত শিশুর পায়খানা হচ্ছে না, পেট ফাঁপা আছে, বুকের দুধ নিতে চাচ্ছে না তা হলে ঘৃতকুমারীর একটু শাঁস খানিকটা মধুর সাথে মিশিয়ে জিহ্বায় ঘষে দিলে পায়খানা হবে। ঘৃতকুমালর পাতার শাঁস চোখের জ্যোতি বাড়িয়ে দেয়। চোখের পাতার আঁচিল নাশ করে। ইহা হজম কারক এবং যকৃতের ক্রিয়া বধৰ্ক। মুসাব্বার (শুষ্ক শাস) খেলে সকল ইন্দ্রিয়ের উত্তেজনা হয়।
ঘৃতুকুমারীর রস অগ্নিদগ্ধ ক্ষতে প্রলেপ দিলে উপকার দর্শে। ইহা কফ, কাশ ও কুষ্ঠ নাশ করে। ইহা গ্রহণী রোগও নাশ করে থাকে। ঋতুবন্ধ হলে ঘৃতকুমারীর পাতার শাস মাসিক ঋতুস্রাব স্বাভাবিক করে থাকে।
একটি পাতাক গরম করে তার গরম শাঁস মধুর সাথে মিশিয়ে সর্দি-কাশিতে প্রয়োগ করা হয়। / ডাঃ উইলিয়াম বোরিক বলেন তিনি ঘৃতকুমারীর তাজা রস খাইয়ে অনেক ক্ষয় কাশের রোগীকে ভাল করেছেন।
হোমিওপ্যাথিতে ঘৃতকুমারীর ব্যবহার
হোমিওপ্যাথিতে ইহা অ্যালো সোকোট্রিনা নামে পরিচিত। ঘৃতকুমারীকে ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দে যথাযথ প্রুভিং-এর মাধ্যমে হেলবিগ (Helbig) সাহেব হোমিওপ্যাথিতে প্রবর্তন করেন। হোমিওপ্যাথিক ঔষধসমূহের মধ্যে অ্যালো (এলো) একটি বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। নিম্নে অ্যালোর প্রস্তুত প্রণালী দেওয়া হলো।
প্রস্তুত প্রণালী :
এক হাজার সি. সি. মাদারটিংচার (6) প্রস্তুত করতে নিম্নলিখিত উপায় অবলম্বন করতে হয়
শুষ্ক শীস (মুসাব্বার) চূর্ণ... .... .... ১০০ গ্রাম
স্ট্রং অ্যালকোহল (প্রায়)... ... ... ১০০০ সি. সি.
অর্থাৎ প্রায় ১০০০ সি. সি. স্ট্রং অ্যালকোহলে ১০০ শুষ্ক শাস চূর্ণ নিয়ে নিয়ম
মত আলোড়িত করলে শাঁস গলে অ্যালকোহলে মিশে যাবে এবং ১x শক্তির ১০ মাদার টিংচার প্রস্তুত হবে। এর এক অংশের সাথে ৯ ভাগ হিসেবে ডিসপেনসিং অ্যালকোহল মিশিয়ে ২x শক্তির ঔষধ প্রস্তুত করা হয় এবং একই নিয়মে ক্ৰমান্বয়ে ৩x, ৪x......... শক্তির ঔষধ প্রস্তুত করা হয়।
অ্যালোর বিশেষ লক্ষণ:
১। পেটের পীড়ায় অসাড়ে মলত্যাগ অর্থাৎ প্রস্রাব কিংবা বায়ু নিঃসরণের সাথেই মল বের হয়ে আসে।
২। মাথাব্যথা গরমে বাড়ে এবং শীতল দ্রব্য ব্যবহারে কমে—এটি অ্যালোর,মাথাব্যথার বিশেষ লক্ষণ। কর।
৩। অর্শ্ব রোগের চুলকানি, জ্বালা-যন্ত্রণা ঠাণ্ডা জলে উপশম হওয়া অ্যালোর আর একটি বিশেষ লক্ষণ।
৪ । অ্যালোর চর্মপীড়া প্রতি বছর শীতকালেই আরম্ভ হয় ।
৫। অ্যালোর রোগী মানসিক পরিশ্রম কাতর, রাগী ও খিটখিটে মেজাজের হয়।
অ্যালোর রোগ গরমে বাড়ে এবং ঠাণ্ডায় কমে (কারণ অ্যালোর শাঁস গরমে গলে যায় এবং ঠাণ্ডায় স্বাভাবিক হয় অর্থাৎ জমে যায় সম্ভবত রোগ লক্ষণ ও উদ্ভিদের বৈশিষ্টের সাথে এরূপ সম্পর্ক থাকতে পারে)।
প্রাপ্তিস্থান : ঘৃতকুমারী আমাদের দেশে সাধারণত বন্য অবস্থায় জন্মায় না তবে অনেকের বাড়িতেই এটিকে মাটির টবে জন্মাতে দেখা যায়। অতি সহজে এটিকে টবে জন্মানো যায় ।