সজিনার উপকারিতা
অন্যান্য নাম: শোভাঞ্জন (সংস্কৃত), সজনে, সজিনা (বাংলা) শোয়াজন (হিন্দি)।
উদ্ভিদের বর্ণনাঃ সজিনা আমাদের দেশে একটি অতি পরিচিত উদ্ভিদ। সাধারণত এর ফলের জন্য প্রায় বাড়িতেই সজিনা লাগান হয়ে থাকে । ইহা একটি বৃক্ষজাতীয় উদ্ভিদ, প্রায় ৩০ ফুট বা তারও অধিক উঁচু হয়ে থাকে। কাষ্ঠ অত্যন্ত নরম, বাকল আঠাযুক্ত ও কর্কি। পাতা ত্রি-পক্ষল যৌগিক, উপপত্র বিহীন, একান্তর। পত্রক ৪-৭ জোড়া, প্রতিমুখ। মঞ্জরী কাক্ষিক রেসিম। পুষ্প সাদা, একপ্রতিসম এবং উভয়লিঙ্গ। বৃত্যংশ ৫টি, পাপড়ি ৫টি, পুংকেশর ৫টি, স্ত্রীকেশর ৩টি। ফল লম্বা ক্যাপসিউল। বীজ পক্ষল। অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ফুল হয় । এর শাখার মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি করা হয়।
সাধারণ গুণ: সজিনা কটু-তিক্ত-কষায় রস, লঘু, রুচিকারক, ধারক, মূত্রকর, শুক্রবর্ধক, বাত বেদনা নাশক, চক্ষুর হিতসাধক, কফ, হাঁপানি, শোথ, ক্রিমি, প্লীহা, গলগণ্ড, ব্রণ প্রভৃতি রোগে হিতকর। ইহা হজমকারক ও রক্ত পরিষ্কারক।
ব্যবহার্য অংশ: মূল, ছাল, আঠা, পাতা, ফুল ও ফল।
ব্যবহার: শরীরের কোন স্থানে ব্যথা হলে বা ফোলে গেলে সজিনার শিকড় বেটে প্রলেপ দিলে ব্যথা এবং ফোলা সেরে যায়।
শিকড়ের ক্বাথ পান করলেও বিশেষ উপকার পাওয়া যায়।
শিকড়ের রস কানে দিলে কান ব্যথা ভাল হয়ে যায় । শিকড়ের রস গাভীর দুধের সাথে মিশিয়ে খেলে মূত্র অবরোধ দূর হয়, প্রস্রাব বৃদ্ধি হয়, মূত্রপাথরী বের হয়ে যায় এবং শোথ রোগ আরোগ্য হয়।
ইহা হাঁপানি, স্বরভঙ্গ, গলার ভিতরকার ক্ষত নিবারক। ঘুড়িকাশি, হাঁপানি, গেঁটেবাত, কটি শূল, বাত, প্লীহা ও লিভার বৃদ্ধি প্রভৃতি রোগে শিকড়ের ক্বাথ দুধের সাথে ব্যবস্থা করা হয়।
শিকড়ের টাটকা রস এবং সরিষা (১: ২০ ভাগ) এক আউন্স মাত্রায় খেতে দিলে প্লীহা ও লিভার বৃদ্ধিজনিত শৈাথ রোগ আরাম হয়।
সজিনা পাতার ক্বাথ পরিমাণ মত পান করলে শরীরের যাবতীয় ফেলা সেরে যায়।
সজিনা পাতা পেষণ করে তাতে রসুন, হলুদ, লবণ ও গোলমরিচ মিশিয়ে সেবন করলে কুকুরের বিষ নষ্ট হয়। পাতার এক পোয়া রস এক তোলা সৈন্ধব লবণের সাথে মিশিয়ে সেবন করলে বহুমূত্র রোগ সেরে যায়।
পাতার শাক খেলে ইনফ্লুয়েঞ্জা জ্বর ও যন্ত্রণাদায়ক সর্দি আরোগ্য হয়।
সজিনা পাতার রস পান করলে হিক্কা রোগ ভাল হয়। পাতার রস স্কার্ভি রোগে ব্যবস্থা করা হয়।
পাতার রসের সাথে লবণ মিশিয়ে খেতে দিলে বাচ্চাদের পেটে জমা গ্যাস দূর হয়।
পাতা বমনকারক: সজিনার ফুল কোষ্ঠকাঠিন্য দোষ দূর করে, দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে, কফ, শ্লেষ্মা নির্গত করে, হজম শক্তি বৃদ্ধি করে, সর্দি কাশি, হাঁপানি নিবারণ করে, মুখের ঘা, পিত্তদোষ দূর করে।
সজিনা ফুল দুধের সাথে রান্না করে নিয়মিত খেলে কামশক্তির বৃদ্ধি ঘটে।
ইহাতে প্রস্রাব দোষও সেরে যায় কারণ ইহা মূত্রকারক। ফুলের ক্বাথ দুধের সাথে মিশিয়ে খেলে মূত্রপাথরী থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
ফুলের ক্বাথ হাঁপানি রোগে বিশেষ হিতকর এর তরকারি খেলে সর্দি, কাশি আরাম হয় এবং এর চাটনী হজমশক্তি বৃদ্ধি করে
সজিনার কচি ফল ক্রিমিনাশক, লিভার ও প্লীহাদোষ নিবারক। প্যারালাইসিস, টিটেনাস প্রভৃতি রোগে হিতকর।
অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের জোড়ার ব্যথায় (গেঁটে বাত) ইহা বিশেষভাবে উপকারী।
কচি ফল নিয়মিত রান্না করে খেলেই গেঁটে বাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়
সজিনার বীজ থেকে যে তেল পাওয়া যায় তাহা মালিশ করলে বিভিন্ন বাতবেদনা, অবশতা, আঁতুর, কটিশূল, সায়াটিকা, বোধহীনতা প্রভৃতি রোগে বিশেষ উপকার পাওয়া যায়। বিভিন্ন চর্মরোগেও এই তেল ব্যবহৃত হয়।
সজিনর আঠা দুধের সাথে খেলে মাথাব্যথা সেরে যায়। আঠা কপালে মালিশ করলেও ব্যথা সেরে যায়।
আঠা বিভিন্ন চর্মরোগে ব্যবহৃত হয়। ফোঁড়া, শরীরের ফোলা পিঁঠ প্রভৃতি স্থানে লাগালেও উপকার পাওয়া যায় ।
সজিনার ছাল উত্তেজক, মূত্রকর, স্কার্ভিরোগ নাশক। ইহার ক্বাথ সর্দি, কাশি, হাঁপানি প্রভৃতি রোগে বিশেষ হিতকর। ছালের স্থানীয় প্রলেপে স্নায়ুশূল, বাতবেদনা প্রভৃতি সেরে যায়।
গর্ভপাতকারক হিসেবে সজিনা: সজিনার ছাল গর্ভপাতকারক। ইহা গর্ভাশয়ের মুখে প্রবেশ করালে গর্ভাশয়ের মুখ প্রসারিত হয়ে যায় এবং গর্ভপাত ঘটে। সজিনার আঠাও জরায়ুর মুখ প্রসারিত করে, তাই গর্ভপাত ঘটায়।
হোমিওপ্যাথিতে সজিনার ব্যবহার
সজিনা এখনও হোমিওপ্যাথিতে অন্তর্ভুক্ত হয় নি। তবে এটি হোমিওপ্যাথিতে একটি উল্লেখযোগ্য ঔষধ হিসেবে প্রবেশ করার যথেস্ট সম্ভাবনা রয়েছে। এর জন্য প্রয়োজন শুধু সযত্ন প্রুভিং-এর ।
প্রাপ্তিস্থান: বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্রই সজিনা পাওয়া যায়। সজিনার ফল তরকারী হিসেবে খাবার জন্যই সাধারণত এটিকে অনেকের বাড়িতেই লাগানো হয়ে থাকে। গাছ থেকে ডাল কেটে লাগালেই নতুন গাছ হয়ে যায়।