সাদা আকন্দ গাছের ২৫টি টোটকা ও আকন্দ গাছের ঔষুধি গুনাগুন

আকন্দ ফলের উপকারিতা,আকন্দ অর্থ কি,আকন্দ নামের অর্থ কি,আকন্দ গাছের অপকারিতা,আকন্দ পাতা ডায়াবেটিস,আকন্দ ফুল নিয়ে কবিতা,সাদা আকন্দ গাছের টোটকা,শীষ আকন্

আকন্দ গাছের উপকারিতা জেনে নিনঃ


নামঃ বাংলায়-আকন্দ । সংস্কৃতিতে-অর্ক । হিন্দীতে- আক, আখা, মদার।


পরিচয়ঃ আকন্দ দুই প্রকার। যথা-

(ক) সাদা আকন্দ

(খ) লাল আকন্দ।

দু'রকম আকন্দ দেখতে প্রায় এক রকম হলেও লাল আকন্দের ডাটা বেগুনী রঙ্গের হয়ে থাকে। আকন্দ সহজেই ফুল দেখে চেনা যায়। 

লাল আকন্দের ফুলের রং বেগুনী এবং সাদা আকন্দের ফুলের রং পীতবর্ণের হয়ে থাকে। পাতা অনেকটা বটবৃক্ষের পাতার মত, তবে আকারে ছোট এবং ওজনে ভারী। পাতা গাছ হতে বিচ্ছিন্ন করলে এক প্রকার সাদা দুধের মত পদার্থ নির্গত হয়। আকন্দ ভারতের প্রায় সব প্রদেশেই জন্মায় । তবে বাংলাদেশেও কোন কোন স্থানে পাওয়া যায়।

আকন্দ ফলের উপকারিতা,আকন্দ অর্থ কি,আকন্দ নামের অর্থ কি,আকন্দ গাছের অপকারিতা,আকন্দ পাতা ডায়াবেটিস,আকন্দ ফুল নিয়ে কবিতা,সাদা আকন্দ গাছের টোটকা,শীষ আকন্দ গাছ,আকন্দ পাতার অপকারিতা,আকন্দ গাছের অপকারিতা,শ্বেত আকন্দ গাছের মূল,আকন্দ গাছের ছবি,আকন্দ গাছ অর্থ,আকন্দ গাছের ফল,সাদা আকন্দের টোটকা,আকুন্দ গাছের ফল,
চিত্রঃ আকন্দ


লাল ও সাদা আকন্দের গুণ ও আময়িক প্রয়োগঃ

দুই প্রকার আকন্দই সারক । প্লীহা, উদরী, যকৃত, ব্রণ, কুষ্ঠ, গুলা, অর্শ, বায়ু, কণ্ডু, কফ, কৃমি ও বিষ বিনাশক। 

সাদা আকন্দ ফুলের বিশেষ গুণ ও আময়িক প্রয়োগঃ

সাদা আকন্দ লঘুপাচক, অগ্নিপ্রদীপক, কফাদি, স্রাব, শ্বাস, কাশ, অর্শ বিনাশক ও শুক্রবৃদ্ধিকারক

সাদা আকন্দ ফুলের বিশেষ গুণ ও আময়িক প্রয়োগঃ 

লাল আকন্দ তিক্ত রসযুক্ত কৃমি, অর্শ, কফ, কুষ্ঠ, গুলা, শোথ, বিষদোষ ও রক্তপিত্ত নাশক। মাত্রা : ২ রতি হতে ৫ রতি পর্যন্ত।


আকন্দের আঠার গুণঃ তিক্ত লবণ রসযুক্ত, লঘু, স্নিগ্ধ ও উষ্ণবীর্য 

আকন্দের আঠার আময়িক প্রয়োগঃ এ আকন্দ উদর রোগ, গুল্ম ও কুষ্ঠ বিনাশক। 

আকন্দের আঠার মাত্রাঃ দশ ফোঁটা পরিমাণ।


আকন্দের ব্যবহার

আকন্দের ফুল, পাতা, শিকড় ও আঠা ঔষধে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সচরাচর লাল আকন্দের ব্যবহারই বেশি। বিশেষ বিশেষ রোগের ক্ষেত্রে সাদা আকন্দ ব্যবহারের নির্দেশ দেয়া হয়ে থাকে। কোন কোন রোগে লাল সাদা দুই প্রকারের আকন্দই করা হয়ে থাকে। শুধুমাত্র 'আকন্দ' উল্লেক থাকলে সাদা বা লাল যে কোন আকন্দই ব্যবহার করা যেতে পারে। যেখানে স্পষ্টভাবে 'সাদা আকন্দ' প্রয়োগ করতে হবে বলে উল্লেখ আছে, সেরূপ ঔষধ প্রস্তুত করার সময় সাদা আকন্দই ব্যবহার করতে হবে। যেস্থানে 'লাল আকন্দ' উল্লেখ রয়েছে, সেরূপ ক্ষেত্রে লাল আকন্দই ব্যবহার করতে হবে।

আকন্দ ভষ্ম তৈয়ারি করার প্রণালীঃ-

কিছু শুষ্ক আকন্দ পাতা এবং ঐ পাতার ওজনের চারভাগের এক ভাগ সৈন্ধব লবণ দিয়ে প্রতিটি পাতা একের পর একটি মাটির হাঁড়িতে রাখতে হবে। তারপর হাঁড়ির মুখ সরা দ্বারা আবদ্ধ করে মাটি লেপন করে দিতে হবে। 

অবশেষে এমনভাবে ঘুঁটে সাজাতে হবে যাতে ২৪ ঘন্টা ব্যাপী আগুন প্রজ্বলিত রাখা সম্ভব হয়। আকন্দ পাতা ও সৈদ্ধব লবণসহ হুঁড়িটি সরা ঢাকা অবস্থায় ২৪ ঘন্টা আগুনে থাকলেই আকন্দ ভষ্ম প্রস্তুত হয়ে যাবে ।


আকন্দ যে সব রোগ আরোগ্য কারকঃ-

১। কুরও বা কোষ বৃদ্ধি হলেঃ কাঁজির (আমনির) সাথে আকন্দের মূলের ছাল পেষণপূর্বক প্রলেপ দিলে কুরও বা কোষ বৃদ্ধি রোধ হয়।

২। পায়ে গোদ হলেঃ আকন্দ মুলের ছাল কাজিসহ পেষণপূর্বক প্রলেপ করলে যথেষ্ট উপকার পাওয়া যায়। 

৩। অম্বল হলেঃ এক আনা পরিমাণ আকন্দ ভষ্ম পানিসহ সেবন করলে সাথে সাথে উপকার পাওয়া যায় ।

৪। পেট কামড়ানি বা পেট জ্বালাঃ আকন্দ পাতার সোজাদিকে উত্তমরূপে সরিষার তৈল মাখায়ে পাতাটি গরম করে পেটের উপর স্থাপন করলে পেট কামড়ানি বা পেট জ্বালা নিবারিত হয়ে থাকে ।

৫। শুল ব্যথাঃ আকন্দ পাতার সোজা দিকে (পিঠে নয়) উত্তমরূপে সরিমার তৈল মাখায়ে ঈষদুষ্ণ করে পেটের উপর বেধে রাখলে পেটের ওল ব্যাথা নিবারিত হয়ে থাকে । 

৬। শোথ রোগঃ আকন্দ বিশেষ উপকারী। শোথজনিত কারণে কোন স্থান ফুলে উঠলে ঐ ফোলা স্থানে আকন্দ পাতা বেঁধে রাখলে বিশেষ উপকার পাওয়া যায়।

৭। প্লীহা বড় হলেঃ এক আনা পরিমাণ আকন্দ ভষ্ম দাধর মাতসহ সেবন। করলে সত্বর প্লীহা সঙ্কুচিত হয় ও রোগ আরোগ্য হয়। 

৮। শ্বাস বা হাঁপানীতে কষ্ট হলেঃ আকন্দ শিকড়ের ছাল প্রথমে চূণ করে। তারপর আকন্দের আঠাতে তা ভিজায়ে রেখে পরে শুরু করতে হবে তদনন্তরতার চুরট বানায়ে ধুমপান করলে শ্বাসকষ্ট নিবারিত হয়।

৯। নিউমোনিয়া জনিত বেদনাঃ আকন্দ পাতার সোজা দিকে ঘৃত মেখে। বেদনাযুক্ত স্থানে বসায়ে তার উপরে লবণের পুটুলি দিয়ে সেক দিলে বিশেষ উপকার পাওয়া যায়।

১০। চোখ ভারি, চোখ মুখ সর্দিতে লাল হলে, মাথায় পানি জমলেঃ শিশুদের আকন্দের তুলায় নির্মিত বালিসে শোয়ালে উপরিউক্ত রোগসমূহ আরোগ্য হল । (আকন্দের ফল পাকলে এক প্রকার তুলা দ্বারা বালিশ তৈরী হয়)। 

১১। কুণ্ঠক্ষতে পোকা সৃষ্ট হলেঃ আকন্দের আঠা দ্বারা উক্ত ক্ষতে প্রলেপ দিলে ক্ষত উপশম হয়।

১২। যকৃত রোগঃ আকন্দের আঠা বিশেষ উপকারী। প্রত্যহ প্রাতকালে আকন্দের আঠা মাত্র দুই ফোঁটা পানিসহ সেবন করলে যকৃত রোগ আরোগ্য হয়ে থাকে। 

১৩। পেটে রোগ হলেঃ প্রত্যহ তিন ফোঁটা আকন্দের আঠা পানিসহ সেবন করলে বিশেষ উপকার পাওয়া যায়। 

১৪। উপদংশ বা গরমী রোগঃ আকন্দ পাতার ক্বাথে যৌনাঙ্গ ধৌত করণে বিশেষ সুফল পাওয়া যায়।

১৫। উপদংশজনিত কারণে চোখ লাল হলেঃ এক তোলা পরিমাণ আকন্দ শিকড়ের ছাল এক পোয়া ঠাণ্ডা পানিতে রেখে ৪ ঘণ্টা পরে ঐ পানি কাপড় দ্বারা ছেঁকে নিতে হবে পরে ঐ পানি ফোঁটা ফোঁটা করে চোখে দিলে চোখের স্বাভাবিক হয় ও চোখের চুলকানি বন্ধ হয়। 

১৬। অর্শ রোগ হলেঃ দুই আনা পরিমাণ লাল আকন্দের ফুলের ক্বাথ কিছুক্ষণ ব্যবহার করলে বিশেষ সুফল পাওয়া যায়।

১৭। গেটে বাত হলে (গ্রন্থিবাত:) আকন্দের পাতা বেদনাযুক্ত স্থানে বেধে রাখলে অথবা আকন্দের আঠার দ্বারা উক্ত স্থান বিশেষরূপে মর্দন করলে বাত-বেদনা নিবাবিত হয়ে থাকে।

১৮। কুকুরের বিষঃ শুদ্ধ আকন্দের আঠা বিশেষ ফলপ্রদ। কুকুর দংশন করলে এক আনা পরিমাণ শুষ্ক আকন্দের আঠার সাথে দুই তোলা আখের গুল্ম, দুই তোলা তিলচূর্ণ উত্তরূপে পেষণপূর্বক মিশ্রিত করে সাতটি বটিকা প্রস্তুত করতে হবে। প্রত্যহ ঐ বড়ি একটি করে এক সপ্তাহ পর্যন্ত সেবন করলে কুকুর দংশনজনিত খারাপ প্রতিক্রিয়া ব্যাহত হয়।

১৯। ব্রন অথবা চুলকানি হলেঃ আকন্দের টাটকা আঠা ব্রণ বা চুলকানিতে লাগালে বিশেষ উপকার পাওয়া যায়। 

২০। বৃশ্চিক দংশন করলেঃ দংশন স্থানে প্রথমে ধূনা অথবা গুগগুলের ধ্রুপ প্রদান করে তথায় আকন্দ পাতা বেঁধে দিলে বৃশ্চিক দংশন জনিত জ্বলা নিবারিত হয়ে থাকে ।

২১। দাঁতে পোকা লাগলেঃ একটি মাটির পাত্রে আকন্দের শুষ্ক আঠা রেখে সামান্য পানি ঢেলে সে পানিতে তুলা ভিজায়ে ঐ তুলা দাঁতের গোড়ায় লাগালে দাঁতের পোকা নষ্ট হয় ও দাঁতের বেদনা নিবারিত হয়। এ ভাবে শিশুর দাঁতে লাগালে শিশুর পেটের কৃমি পর্যন্ত বিনষ্ট হয়ে থাকে।

[বিঃ দ্রঃ অবশ্য আকন্দের আঠা শিশুরা যাতে গিলে ফেলতে না পারে সে দিকে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করা আবশ্যক।

২২। গৃহদেশের অবাঞ্ছিত চুল তুলে ফেলতে হলেঃ প্রথমে অবাঞ্ছিত চুলযুক্ত স্থানে উত্তমরূপে আকান্দের আঠা লাগাতে হবে, তারপর ঐ স্থানে সরিষার তৈল মর্দন করলে চুল উঠে আসবে। 


২৩। হজম শক্তি ব্যাহত হলেঃ  ২ রতি পরিমাণ শুষ্ক আকন্দ মূলচূর্ণ সেবন করলে অগ্নি প্রদীপ্ত হয়ে ক্ষুধা বৃদ্ধি পায়। 

২৪। কফাদি স্রাবঃ সাদা আকন্দের ফুল ব্যবহার করলে বিশেষ উপকার পাওয়া যায়।

২৫। কান কটকট করলেঃ পুরাতন ঘৃত আকন্দ পাতায় লেপন করে নিভা আগুনে ঘৃত প্রলিপ্ত পাতাগুলি সেঁকতে হবে তারপর সেঁকা পাতা নিষ্কাশনপূর্বক রস বের করে কানের ভিতর সহ্য ক্ষমতা অনুযায়ী ৫ ফোঁটা ফেলে তুলা দ্বারা কিছুক্ষণ কান বন্ধ করে রাখলে কান কটকটি রোগ আরোগ্য হয়।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন