হস্ত রেখার বর্ণনা
প্রত্যেক মানুষের হাতের তালু ও আঙ্গুলের অসংখ্য বিভিন্ন রকমের রেখা অংকিত থাকে । এ সকল সাংকেতিক চিহ্ন দ্বারা মানুষের জীবনের অতীত বর্তমান ও ভবিষ্যৎ ফলাফল এবং শুভাশুভ অবগত হওয়া যায় । যদিও হস্তরেখা দ্বারা মানুষের ভাল-মন্দ, আয়-উন্নতি ও চরিত্র প্রকৃতির বিচার করা ইসলামী শরীয়ত সমর্থিত হয়। তাছাড়া বিজ্ঞান এতে সমর্থন করে না।
শুধু জ্যোতিষদের মতে মানুষের হস্তরেখাসমূহ বিরাট অর্থবহ এবং শুঢ় তাৎপর্যপূর্ণ। তাদের মতে মানুষের হাতের প্রতিটি রেখারই ভিন্ন ভিন্ন তাৎপর্যপূর্ণ অর্থ রয়েছে। এ রেখা সমূহের বৈষম্য মানুষের মঙ্গলামঙ্গলের তারতম্য ও বৈচিত্র সৃষ্টি
বাস্তবেও দেখা যায় হাতরেখা বিশারদ জ্যোতিষগণ মানুষের হাত দেখে রেখা বিশ্লেষণ করে যে সকল মন্তব্য করেন, প্রায় প্রত্যেক ক্ষেত্রেই তা সঠিকভাবে ফলে যায়।
এ সমস্ত রেখা অভিজ্ঞ ব্যক্তি ব্যতীত সাধারণ মানুষের পক্ষে বিচার বিশ্লেষণ করে ফলাফল নির্ণয় করা অসম্ভব। নিমে হস্তরেখা সমুহের ফলাফল উল্লেখ করা হলােঃ
পুরুষের ডান হাত ও স্ত্রীলােকের বাম হাতের রেখা দেখে ফলাফল নির্ণয় করতে হয় ।
মানুষের হাতে প্রধানতঃ যে সমস্ত রেখাসমুহ অংজকতি থাকে উহা সাধারণতঃ নিম্নোক্ত নামে অংকিত হয়ে থাকে।
রেখা সমূহের নাম
১। আয়ু বা শ্রেষ্ঠ রেখা।
২। মেধা রেখা বা গৃহস্থি রেখা।
৩। ভাগ্য রেখা।
৪। দেলী বা হৃদয় রেখা।
৫। সুখী রেখা।
৬। কামিয়াবী বা পূর্ণতা রেখা।
৭। ছেহেতি বা শান্তি রেখা।
৮। স্বাস্থ্য রেখা।
৯। বিবাহ রেখা।
১০। সন্তান রেখা।
আয়ু বা শ্রেষ্ঠ রেখা
হাতের তালুর মূল দেশ থেকে আরম্ভ করে যে লম্বা ও স্থুল রেখাটি বৃদ্ধা ও তর্জনী আঙ্গুলীর মধ্যস্থলে আঙ্গলীর মূল দেশ পর্যন্ত পৌঁছে থাকে তাকে আয়ু রেখা। বা শ্রেষ্ঠ রেখা বলা হয়।
এ রেখা দীর্ঘ, গভীর ও পরিষ্কার থাকলে জীবন নির্ভিগ্নে অতিবাহিত হবে এবং দীর্ঘায়ু লাভ করবে। এ রেখাটি যার যত দীর্ঘ ও সুস্পষ্ট তার আয়ুও তত দীর্ঘ বুঝতে হবে।
আয়ু রেখাকে অন্য কোন রেখা কর্তন না করলে এবং উহা স্বল্প ও খুঁতহীন। হলে সে লােক সুস্থ দেহে দীর্ঘ জীবন লাভ করবে, অন্য দিকে উহা যদি ক্ষুদ্র ও অপরিচ্ছন্ন হয় তবে সে বার বার রােগাক্রান্ত হয়ে পড়বে এবং অল্পায়ু হবে।
আয়ু রেখা যদি কিছুদূর অগ্রসর হয়ে মেধা গৃহস্থি রেখার সাথে মিলিত হয়ে পুনরায় পৃথক হয়ে যায়। তবে সে তােক স্বল্পায়ু হবে কিন্তু সে অত্যন্ত বুদ্ধিমান ও স্বাস্থ্যবান হবে।
সাধারণতঃ- আয়ু রেখা বৃদ্ধা ও তর্জনী আঙ্গুলের মধ্যস্থলে পৌঁছে থাকে। যদি কোন লােকের আয়ু রেখা শুধু বৃদ্ধাঙ্গুলীর মূল পর্যন্ত উপস্থিত হয় তবে মর্যাদাশালী হবে আর যদি উহা শুধু তর্জনী আঙ্গুলের মূল দেশ পর্যন্ত পৌঁছে তবে সে লােক প্রেমিক ও রুগ্ন স্বভাব সম্পন্ন হবে।
যার আয়ু রেখা সরু রেখা সহযােগে গঠিত সে দীর্ঘ জীবন লাভ করে থাকে ও অত্যন্ত শক্তিশালী হয়। যার আয়ু রেখার মধ্যে গ্রন্থির ন্যায় দেখা যায় সে প্রায়ই রােগাক্রান্ত থাকে, সুস্পষ্ট ও সরল আয়ু রেখা দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্যের পরিচায়ক।
যার আয়ু রেখা থেকে ছােট ছােট সরু রেখা বের হয়ে নিচের দিকে নেমে গেছে সে রােগাক্রান্ত ও আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অন্য দিকে উক্ত রেখাগুলাে যদি উপরের দিকে উঠে যায় সে জীবনে বহু উন্নতি লাভ করতে পারবে।
যদি এ রেখাসমূহের কোন একটি রেখা তর্জনী আঙ্গুলের মূলদেশে উপনীত হয় তবে তা জীবনে পরম উন্নতির লক্ষণ তার যদি মধ্যমা আঙ্গুলের মূল দেশে পৌঁছে তবে চেষ্টা ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে ধীরে ধীরে জীবনে সমৃদ্ধ লাভ করতে পারবে।
উহা অনামিকার মূলদেশে পৌঁছলে কর্মঠ, ভাগ্যবান ও খ্যাতিসম্পন্ন হবে। যদি উক্ত রেখা কনিষ্ঠ আঙ্গুলীর মূল দেশে পৌঁছে তবে সে শিক্ষাক্ষেত্রে ও ব্যবসায়বাণিজ্যে, উন্নতির শীর্ষদেশে পৌঁছতে পারবে।
যদি আয়ু রেখার মাঝে ছােট ছােট রেখা দ্বারা কাটা দেখা যায় তবে সে লােক বার বার রােগগ্রস্ত হবে।
অন্য কোন ছােট রেখা আয়ু রেখাকে কেটে মেধা রেখায় পৌঁছে যায় তবে তার কোন আত্মীয় তাকে ক্লেশ প্রদান করবে। আয়ু রেখার মাথার দিকে কোন শাখা রেখা দেখা দিলে তার হঠাৎ মৃত্যুর সম্ভাবনা।
আয়ু রেখা থেকে কোন শাখা বের হয়ে মেধা রেখার সঙ্গে মিলিত হলে সে লােক সন্তান দ্বারা সুখী হতে পারবে না।
আয়ু রেখা মেধা রেখা বরাবর সমান্তরাল অঙ্কিত হলে সে লােক একগুয়ে বদরাগী ও সাহসী হবে।
যার হাতে আয়ু রেখা নেই বা থাকলেও তা অস্পষ্ট সে লােক অতিশয় ধূর্ত। চালাক নিষ্ঠুর প্রকৃতির ও দুরভিসন্ধিমূলক।
যার আয়ু রেখা মেধা রেখার সাথে মিলে গেছে, তার ভাগ্য বৈচিত্রপূর্ণ। ক্ষেত্রভেদে কেহ কেহ দীর্ঘায়ু লাভ করে থাকে আবার কেহ কেহ অকাল মৃত্যুবরণ করে।
যার আয়ু রেখা বৃদ্ধাঙ্গুলীর মূলদেশ থেকে উৎপন্ন হয় সে লােক অত্যন্ত স্ত্রৈন। আর যার রেখা তর্জনী আঙ্গুলের মূলদেশ থেকে উৎপন্ন হবে সে লােক ক্রোধপরায়ণ ও কর্কশ মেজাজের হয়ে থাকে। আর উহা বৃদ্ধা ও তর্জনী আঙ্গুলের মধ্যস্থল থেকে উৎপন্ন হলে সে তােক কোমল স্বভাব শান্ত প্রকৃতির ও লজ্জাশীল হয়ে থাকে।
মেধা রেখা বা গৃহস্থি রেখা
যে রেখা আয়ু রেখার সামান্য বাম পার্শের নিচ থেকে শুরু হয়ে হাতের তালুর মাঝখান দিয়ে বৃদ্ধা ও তর্জনী আঙ্গুলীর মধ্য দিয়ে উঠে সে রেখার নিকটে পৌঁছে কিংবা আয়ু রেখার সাথে মিলিত হয় তাকেই বলা হয় মেধা বা গৃহস্থি রেখা।
যার মেধা রেখা আয়ু রেখার সাথে একত্রে মিলিত হয়, সে ব্যক্তি জীবনে বহু কষ্ট ক্লেশ ভােগ করে থাকে। আর যদি আংশিকভাবে মিলিত হয় কিংবা নিকটে গিয়ে শেষ হয়ে যায় তবে উপরােক্ত সৌভাগ্যের নিশানাগুলাে দৃষ্ট হয়।
মেধা রেখা হাতের তালুর উপর থেকে নীচ পর্যন্ত বিস্তৃত হলে তার জীবনের সকল কাজই প্রশংশনীয়ভাবে সফল হবে এবং কখনাে কোন ব্যর্থতা তাকে স্পর্শ করতে পারবে না।
যদি মেধা রেখা হাতের তালুর মধ্য পর্যন্ত এসেই শেষ হয়ে যায় তবে সে ব্যক্তি অত্যন্ত স্বার্থপর ও লােভী হয়।
মেধা রেখা সরল না হয়ে উহা কনিষ্ঠ আঙ্গুলের দিকে মােড় নিলে সে লােকের ভুল ভ্রান্তি বেশী হবে এমনকি তার স্মৃতিহীন হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে।
আর অনামিকা আঙ্গুলের দিকে মােড় নিলে সে লােক একগুয়ে ও স্বেচ্ছাচারী হয়।
মেধা রেখা থেকে দুটো শাখা বের হয়ে কনিষ্ঠ ও অনামিকা আঙ্গুলের মূলদেশের দিকে গেলে সে লােক ধীরস্থির ও সুযােগ্য হবে।
আর মেধা রেখা থেকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনেকগুলাে শাখা রেখা বের হয়ে উক্ত শাখা বৃদ্ধাঙ্গুলী ব্যতীত অন্যান্য আঙ্গুলের মূলদেশে পৌঁছে গেলে সে মর্যাদাবান, বিদ্বান ও ধার্মিক হতে পারবে।
মেধা রেখা থেকে কোন শাখা রেখা বের হয়ে বৃদ্ধাঙ্গুলীর মূলে যেয়ে উপস্থিত হলে তবে সে সমাজের নেতৃত্ব লাভ করবে।
যার হাতের তালুতে মেধা, রেখা আড়াআড়িভাৱে অঙ্কিত থাকে সে ব্যক্তি ব্যবসায়-বাণিজ্যে যথেষ্ট উন্নতি করতে পারবে ।
আর ইহা হাতের ডগার দিকে কিঞ্চিত ঢালু ও এর বিপরীত দিকে একটু নিম্নগামী হলে সে ব্যক্তি শিল্পী বা কৰি হবে।
যার মেধা রেখা খুৰ সবল, গভীর ও তালুর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত সে অত্যন্ত উদার ও অসাধারণ গুণসম্পন্ন হয়ে থাকে।
ভাগ্য রেখা
আয়ু রেখার মূলদেশ গােড়ার দিক থেকে যে রেখাটি বের হয়ে সােজা উপরে মধ্যমা আঙ্গুলীর মূলদেশ পর্যন্ত পৌঁছেছে তাকে ভাগ্যরেখা বলা হয়।
এ রেখা যার হাতে বিদ্যমান থাকে সে অত্যন্ত ভাগ্যবান, মর্যাদাশীল ও সম্পদশালী হয়। এ রেখা আয়ু রেখার সাথে যুক্ত অবস্থায় কিছু উপরে উঠে সােজা হয়ে পরিষ্কার ভাবে তর্জনী আঙ্গুলীর মূলদেশ পর্যন্ত উপস্থিত হলে বুঝতে হবে সে প্রথম জীবনে বিশেষ উন্নতি লাভ করতে সমর্থ হবে না। অবশ্য পরবর্তী জীবনে | অগাধ সম্পত্তির মালিক হবে।
যদি ভাগ্য রেখা হাতের তালুর ত্রিভুজ রেখা থাকে উৎপন্ন হয়ে, তর্জনী আঙ্গুলির মূলদেশে কিংবা তর্জনী ও মধ্যমা আঙ্গুলির মধ্যস্থলে উপনীত হয় তাহলে সে অত্যন্ত খােদাভক্ত ও সৌভাগ্যবান হবে।
যার ভাগ্য রেখা হাতের তালুর মধ্যস্থল থেকে উৎপন্ন হয়ে স্পষ্টভাবে তর্জনীর মূলদেশে উপনীত হয় তার জীবনের প্রথম দিকের ২৫ বৎসর পর্যন্ত দুঃখ-কষ্টের ভিতর কাটিয়ে শেষ জীবনে সুখ সম্পদের অধিকারী হবে।
আর ভাগ্যরেখা যদি মেধা রেখা থেকে আরাে উপরে উঠে থাকে তবে সে ব্যক্তিকে ২৫ থেকে ২৮ বৎসর বেকারত্বের দুঃসহ জ্বালা সহ্য করার পর একজন তেজস্বী ও মেধাবী লােক হবে।
যদি ভাগ্য রেখা আয়ু রেখা থেকে উৎপন্ন হয়ে উপরের দিকে উঠে যায় তাহলে জীবনের দুই-তৃতীয়াংশ বিপদে কাটলেও শেষ জীবন সুখে কাটবে।
যার ভাগ্য রেখা আয়ু রেখা থেকে উৎপন্ন হয়ে কিছুদূর উপরে উঠে সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে যায় তবে সে প্রথম জীবনে সুখে কাটলেও শেষ জীবনে দুঃখ-দারিদ্রে পড়বে এবং বার বার রােগাক্রান্ত হবে।
যদি ভাগ্য রেখা সােজাসুজি মধ্যমা আঙ্গুলীর মূলদেশ পর্যন্ত চলে যায়, কিন্তু উক্ত রেখা মধ্যে মধ্যে খণ্ডিত থাকে তাহলে সে ব্যক্তির চির জীবনে পর্যায়ক্রমে সুখ-দুঃখ ঘুরে ঘুরে আসতে থাকে।
আর ভাগ্য রেখা থেকে অসংখ্য ছােট ছােট শাখা রেখা বের হয়ে তা উপর দিকে উঠে যায় তাহলে সে মহা-সৌভাগ্যবান ও সম্পদশালী হবে ছুি এ র ছােট শাখা রেখাগুলাে যদি নিচের দিকে চলে যায় তবে তার জন্য তা দুর্ভাগ্যের লক্ষণ।
এ ব্যক্তি দুঃখ-দুর্দশায় জীবন কাটাবে এবং আর্থিক ক্ষতি ও শারীরিক অসুখ-বিসুখের সম্মুখীন হতে হবে।
ভাগ্য রেখার মধ্যে ছােট ছােট অসংখ্য আঁকাবাঁকা রেখা আঁকা থাকলে তার জীবনে বার বার সুঃখ-দুঃখের আগমন ঘটবে।
যার ভাগ্যরেখা বৃদ্ধাঙ্গুলির মূলদেশ থেকে উৎপন্ন হয় এবং মেধা রেখাটি খুব সরু হয় তাহলে সে তােক খুব ইন্দ্রিয় গ্রাহ্য হয়।
যার ভাগ্যরেখা বৃদ্ধাঙ্গুলীর মূলদেশ থেকে যত বেশী দূরে উৎপন্ন হয় ততই স্বাধীন ও অন্যের প্রভাব থেকে মুক্ত থাকে।
যার ভাগ্যরেখা মধ্যমা আঙ্গুলীর মূলদেশ পর্যন্ত চলে যায় তাহলে সে ব্যবসায়-বাণিজ্য ও শিল্প দ্রব্য দ্বারা বিরাট লাভবান হয়ে থাকে।
ভাগ্যরেখা থেকে উৎপন্ন হয়ে তর্জনী আঙ্গুলীর মূলদেশ পর্যন্ত পৌঁছলে সে ব্যক্তি নেতৃত্ব লাভের অধিকারী হয়।
উহা অনামিকা আঙ্গুল পর্যন্ত চলে গেলে সে বক্তা, অভিনেতা কিংবা আইনজীবি হয়ে সুখ্যাতি অর্জন করে।
আর উহা কনিষ্ঠা আঙ্গুলের দিকে চলে গেলে সে লােক রাজা বা রাজ প্রতিনিধি, মন্ত্রী কিংবা সেনাপতির ন্যায় গুরুত্বপূর্ণ পদে নিযুক্ত হয়ে থাকে।
যার হাতে ভাগ্যরেখার কোন অস্তিত্ব নেই সে সারা জীবন অভাৱে সাথে সংগ্রাম করে বহু দুঃখ-কষ্টের ভিতর দিয়ে জীবন কাটায়।
সুখ-শান্তির সাথে তার কখনই পরিচয় ঘটে না। সে যত অধিক অর্থ উপার্জন করুক না কেন একটা পয়সাও হাতে জমা করে রাখতে পারে না।
দেলি রেখা বা হৃদয় রেখা
তালুর উপরিভাগে কনিষ্ঠ আঙ্গুলের মূলদেশের নীচ থেকে শুরু হয়ে মধ্যমা ও তর্জনী আঙ্গুলের মূলদেশ পর্যন্ত যে রেখাটি অঙ্কিত থাকে তাকে দেলী বা হৃদয় রেখা বলা হয়।
এ রেখাটি যার হাতে অধিক পরিষ্কার সে ধীরস্থির, শান্ত প্রকৃতির, সহানুভূতিসম্পন্ন, প্রেমিক, দয়ালু ও দীর্ঘজীবি হয়ে থাকে।
এ রেখাটি যদি উচ্চতা ও গভীরতায় মেধা রেখার সমান হয় তবে তার দ্বারা বহু থেক উপকৃত হয়ে থাকে।
তার উচ্চতা ও গভীরতা মেধা রেখার চেয়ে কম হলে তার মনােবল অত্যন্ত দৃঢ় হয়।
এ রেখাবিশিষ্ট লােক বিয়ের প্রতি উদাসীন থাকে এমনকি অনেকে চিরকুমার পর্যন্ত থেকে যায়। এ রেখা খুব সরু ও গভীর হলে, হয় তারা দেবতার সমতুল্য নয়তাে মনুষ্যত্বহীন পশুর পর্যায়ভুক্ত হয়।
এ রেখা অগভীর কিন্তু বেশ প্রশস্ত হলে প্রেমের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করে। কারাে হাতে দুটো হৃদয় রেখা থাকলে তারা পরােপকারে তাদের সর্বস্ব বিলিয়ে দিতেও কুষ্ঠিত হয় না।
মােটকথা এ সমস্ত মানুষ সম্পূর্ণ আত্মভােলা প্রকৃতির, নিজেদের ভাল-মন্দ নিয়ে চিন্তা করার সময় তাদের নেই।
যাদের হৃদয় রেখা বৃদ্ধাঙ্গুলির মূলদেশ থেকে শুরু হয় সে লােক অত্যন্ত স্বীগতপ্রাণ ও প্রেমিক স্বভাব সুলভ হয়।
যদি উহা তর্জনী ও বৃদ্ধাঙ্গুলীর মধ্যস্থল থেকে উৎপন্ন হয় তবে সে লােক অত্যন্ত শান্ত ধীরস্থির এবং লাজুক প্রকৃতির হয়।
যাদের হৃদয় রেখা তর্জনী ও মধ্যমাঙ্গুলীর মূলদেশ থেকে আরম্ভ হয় তারা। অত্যন্ত প্রেমিক সুলভ হয়। আর তর্জণী ও মধ্যমাঙ্গুলীর মধ্যস্থল থেকে আরম্ভ হলে তারা প্রেম-ভালবাসাকে যথাসম্ভব এড়িয়ে চলতে চেষ্টা করে। এরা সর্বদা নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত থাকে, অন্যের দিকে ফিরে তাকাবারও অবসর পায়
যাদের হৃদয় বা দেলী রেখা মধ্যমাঙ্গুলীর গােড়া থেকে শুরু হয় তারা অত্যন্ত কঠিন ও হৃদয়হীন হয়ে থাকে।
অন্যকে ভালবাসা তাে দূরের কথা কারাে বিপদআপদে মৌখিক সহানুভূতিটুকু পর্যন্ত প্রকাশ করার প্রয়ােজনীয়তাটুকু পর্যন্ত মনে করে না।
যাদের দেলী রেখার মধ্যে অনেকগুলাে ছােট ছােট রেখা এসে প্রবেশ করেছে। অর্থাৎ একটা গ্রন্থির মতাে দেখতে, তারা অত্যন্ত কামুক প্রকৃতির হয়ে থাকে। বাইরে এদেরকে দয়া-মায়াশীল প্রেমিক বলে মনে হলেও শুধু কামপ্রবৃত্তি চরিতার্থই তাদের প্রেমের মূল কারণ।
যাদের দেলী রেখা অন্য রেখা দ্বারা কেটে যায় সে অত্যন্ত গর্বিত হয়ে থাকে। যার উক্ত রেখা কনিষ্ঠাঙ্গুলীর নিচে যায় সে অত্যন্ত নির্বোধ ও লােভী হয়ে থাকে। আর যার হাতে হৃদয় রেখা থাকে না সে অত্যন্ত কঠোর প্রকৃতির হৃদয়হীন হয়ে থাকে।
সখী রেখা
যে রেখাটি আয়ু রেখা থেকে উৎপন্ন হয়ে চতুর্থ অর্থাৎ অনামিকা আঙ্গুলী পর্যন্ত পৌঁছে তাকে বলা হয় সুখী রেখা।
যার হাতে এ রেখা বিদ্যমান থাকে সে সারা জীবন সুখ-শান্তিতে অতিবাহিত করে। যার হাতে এ রেখাটি উৎপন্ন হয়ে সামান্য কিছু উপরে উঠেই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে তার জীবনে সুখ-দুঃখ পর্যায়ক্রমে ঘুরে ঘুরে আসে।
কামিয়াবি বা সাফল্য রেখা
হাতের কজ্বার নিচে কনিষ্ঠাঙ্গুলীর মূলদেশ থেকে সামান্য বাঁকাভাবে যে ছিরেখাটি হাতের উপরের দিকে চলে যায় তাকে কামিয়াবী বা পূর্ণতা রেখা বলা হয়।
যার হাতে এ রেখা বিদ্যামান থাকে তার সকল প্রকার মনােবাসনাসমূহ সফলতা লাভ করে এবং উদ্দেশ্য সিদ্ধি হয়। তার জীবনে ব্যর্থতা বা পরাজয়ের গ্লানি বলে কিছু নেই।
ছেহেতি বা শান্তি রেখা
হৃদয় বা দেলী রেখার মূলদেশ থেকে একটি রেখা বের হয়ে বৃদ্ধাঙ্গুল মূলদেশ পর্যন্ত পৌঁছে এ রেখাটিকেই ছেহেত বা শান্তি রেখা বলে।
যার হাতে উক্ত রেখা বিদ্যমান থাকবে, সে তােক চিরদিন সম্পূর্ণ সুস্থ ও নীরােগ থাকবে।
উক্ত রেখাটির মধ্যে ছােট ছােট রেখা দ্বারা কাটা চিহ্ন থাকবে কিংবা হাতের রেখাটির কোন অস্তিত্ব না থাকলে সে লােক প্রায়ই অসুখ-বিসুখে আক্রান্ত হয়ে পড়বে।
যার ছেহেতি বা শান্তি রেখা আয়ু রেখার সাথে মিলিত না হয়ে অন্য কোন দিকে চলে যায় সে অতি দীর্ঘ জীবন লাভ করবে এবং রােগমুক্ত থাকবে।
যার হাতের ছেহেতি রেখা যত বেশী সােজাভাবে নিচের দিকে নেমে গেছে তার স্বাস্থ্যও তত ভাল থাকে।
যার ছেহেতি রেখা মেধা রেখাকে অতিক্রম করতে বেশ গভীর ও স্পষ্ট হয়ে উঠে, তার প্রায়ই শিরঃপীড়া হয়, আর যার ছেহেতি রেখা বাঁকা ও কালচে দেখা যায়, চিরদিনই তার একটা না একটা অসুখ লেগেই থাকে।
যার ছেহেতি রেখা, 'হৃদয় রেখা ও আয়ু রেখার সাথে একত্রে মিলিত হয়ে হাতের তালুর মধ্যস্থলে একটি ত্রিভুজ চিহ্ন অংকিত হয় তার হৃদরােগ হবার সম্ভাবনা বেশী থাকে। যার ছেহেতি বা শান্তি রেখার এক বা একাধিক স্থানের ভাঙ্গা বা কাটা দেখা যায় তার হজমশক্তিতে গােলমাল দেখা যায়।
যার ছেহেতি রেখার মধ্যে গােলাকার বৃত্ত অংকিত থাকে ও চর্তুভুজ চিহ্ন আঁকা থাকে তার চক্ষুরােগ হয়ে থাকে।
আর তারকা চিহ্ন থাকলে সে জন্মভূমি ত্যাগ করে অন্য দেশে যেয়ে মৃত্যুমুখে পতিত হবে। টেটা অথবা কোচের চিহ্ন থাকলে সে স্বল্পায়ু হয়, তিন রেখা দ্বারা বেষ্টিত ও একদিকে খােলা থাকলে আর্থিক দিক দিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
যার ছেহেতি বা শান্তি রেখা থেকে কোন শাখা বের হয়ে আয়ু রেখার কাটা স্থানে মিলিত হয় অল্প বয়সেই তার মারা যাবার সম্ভাবনা থাকে।
বিবাহ রেখা
হাত মুষ্টিবদ্ধ করলে কনিষ্ঠাঙ্গুলীর মূল দেশ (হাতের পার্শে) সােজা নিচের দিকের যে কয়টি রেখা দেখা যায় তাকে বিবাহ রেখা বলে।
উক্ত রেখার সংখ্যা যে কয়টি তার দ্বারা বিবাহের সংখ্যা নিরূপণ করা যায়। বিবাহ রেখাগুলাের মধ্যে ছােট ও অস্পষ্ট রেখাগুলাে দ্বারা স্ত্রীর মৃত্যুর সংখ্যা বােঝা যায় এবং যে কয়টি দীর্ঘ এবং লম্বা রেখা দেখা যায় সে কয়টি স্ত্রী স্বামীর আজীবন সঙ্গিনী থাকবে।
সন্তান রেখা
হাতের তালুর নিচের দিকে বিবাহ রেখার নিচে আরও কতগুলাে ছােট বড় রেখা দেখা যায়। সে রেখাগুলােকে সন্তান রেখা বলা হয়।
ঐ রেখাগুলাের মধ্যে অপেক্ষাকৃতভাবে যে রেখা কয়টি বড় তা দিয়ে পুত্র সন্তান এবং যে কয়টি অপেক্ষাকৃত ছােট তা দিয়ে কন্যা সন্তানের ধারণা পাওয়া যায়।
ঐ রেখাগুলাের মধ্যে যে কতিপয় রেখা স্পষ্টভাবে দেখা যায় সে কটি বেচেঁ থাকবে আর যে কটি রেখা অস্পষ্ট দেখা যায় সে কটি সন্তান অল্প বয়সেই মারা যায়।
অন্যান্য রেখা
উপরােল্লিখিত রেখাগুলাে ছাড়াও কারাে কারাে হাতে বিশেষ কতগুলাে রেখা দেখা যায়। সেগুলাে নিম্নে বর্ণিত হলােঃ
বৃদ্ধাঙ্গুলির মূলদেশের উপরিভাগে যে রেখাসমূহ দেখা যায় তা হলাে ভাই বােনের রেখা, অপেক্ষাকৃত বড় রেখাগুলাে দ্বারা ভাইয়ের সংখ্যা এবং ছােটগুলাে দ্বারা বােনের সংখ্যা নিরূপণ করা যায়।
আর অপেক্ষাকৃত অস্পষ্ট রেখাগুলাে দ্বারা ভাই-বােনের মৃত্যুর সংখ্যা বােঝা যায়। যাদের হাতে রেখার অস্তিত্ব নেই, বুঝতে হবে তাদের ভাই-বােনের অস্তিত্ব নেই।
বিভিন্ন চিহ্ন রেখা
এছাড়াও আরাে কতগুলাে বিশেষ রেখা আছে। যেমনঃ
কারাে হাতের তালুতে তসবিহ চিহ্ন থাকলে সে. খােদা-প্রেমিক ও অলী আওলিয়া হবে।
কারাে হাতের তালুতে চন্দ্র চিহ্ন থাকলে সে সম্পদ ও ঐশ্বর্যশালী হবে।
কারাে হাতে অস্ত্র চিহ্ন থাকলে সে ধিরস্থির বুদ্ধিমান লােক হবে।
কারাে হাতে চেয়ার চিহ্ন থাকলে সে সুখ-শান্তি লাভ করবে।
কারাে হাতে টুপি চিহ্ন থাকলে সে রাজা রাজপ্রতিনিধি হবে।
কারাে হাতের তালুতে ত্রিভুজ চিহ্ন থাকলে সে সৌভাগ্যবান হয়।
কারাে হাতের তালুতে চতুর্ভুজ চিহ্ন থাকলে সে লোক ভয়-ভীতিশুন্য হবে।
কারাে হাতের তালুতে দোয়াতের ন্যায় চিহ্ন থাকলে সে কবি বা সাহিত্যিক হবে।
কারাে হাতের তালুতে গাড়ী চিহ্ন থাকলে সে ভবঘুরে হবে।
কারাে হাতের তালুতে ইদুরের ন্যায় চিহ্ন থাকলের সে চোর হবে।
কারাে হাতের তালুতে মাছের ন্যায় চিহ্ন থাকলে সে প্রচুর অর্থ লাভ করবে।
হাতের আঙ্গুলির রেখাসমূহ
জ্যোতিষদের মধ্যে তালুর রেখাগুলাে যেমন তাৎপর্যপূর্ণ তেমনি হাতের আঙ্গুলের রেখা সমূহও অর্থপূর্ণ। আঙ্গুলের রেখাগুলাের ভিন্ন ভিন্ন অর্থ রয়েছে।
যার আঙ্গুলের পেটে একটি চক্রাকার রেখা রয়েছে তার জীবন সুখ-শান্তিতে অতিবাহিত হবে।
দুটো চক্রাকার রেখা থাকলে সে লােক বিশেষ মর্যাদায় ভূষিত হবে।
তিনটি চক্রাকার রেখা থাকলে সে লােক প্রচুর ধন-সম্পদ লাভ করে। জাকজমকপূর্ণ জীবন কাটাবে।
চারটি চক্রাকার রেখা থাকলে সে লােক ধার্মিক কিন্তু অভাব-অনটন লেগেই থাকবে।
পাচটি চক্রাকার রেখা থাকলে সে লােক স্ত্রৈন হবে।
ছয়টি চক্রকার রেখা থাকলে সে লােকের বৃথা ধন-সম্পদ অপচয় হবে পরিণামে বিপদে পড়বে।
সাতটি চক্রাকার রেখা থাকলে সে লােক ধর্ম-কর্মে অবিচল থাকবে।
আটটি চক্রাকার রেখা থাকলে সে সর্বদা কোন না কোন রােগে আক্রান্ত থাকবে।
নয়টি চক্রাকার রেখা থাকলে সে লােক ঐশ্বর্যশালী ও ব্যবসায়ী হবে।
দশটি চক্রাকার রেখা থাকলে সে আমীর, নতুবা উচ্চ পর্যায়ের অলীদরবেশ হবে।
আঙ্গুলের পেটে একটি খাড়া দীর্ঘ রেখা থাকা আনন্দের নিশানা।
দুটি খাড়া দীর্ঘ রেখা থাকা দরিদ্রের নমুনা।
আর চার থেকে দশটি রেখা থাকা ধন-সম্পদ ও প্রাচুর্যের নিশানা।
যার আঙ্গুলের পেটে চার চারটি সিং-এর মত নকশা থাকবে সে অত্যন্ত অভাব-অভিযােগের মধ্যে দিন কাটাবে। কায়িক পরিশ্রম দ্বারা তার রুজি রােজগার উপার্জন করতে হবে।
যার এরূপ পাঁচটি রেখা থাকবে সে ভাগ্যহীন লােক হবে।
যার এ ধরনের ছয় থেকে দশটি পর্যন্ত রেখা থাকবে সে বহু ধ-সম্পদ ও সম্মানের অধিকারী হবে ।
যার বৃদ্ধাঙ্গুলির পেটে ছিপের মত একটা রেখা থাকবে সে ভাগ্য বিতাড়িত লোক হবে ।
যার এরূপ দুটো কিংবা তিনটে রেখা থাকবে সেও নির্মম ভাগ্যের শিকার হবে ।
যার এরূপ চারটে রেখা থাকে সে লোক অতিশয় কর্মঠ ও খ্যাতিসম্পন্ন হবে ।
যাদের এরূপ পাঁচটি থাকে দশটি পর্যন্ত রেখা থাকবে সে লোক বিখ্যাত লেখক, উচ্চ শিক্ষিত ও বহু সম্মানের অধিকারী হবে ।
উপসংহার
হস্ত রেখা দেখা কোন কঠিন কাজ নয় । নিজে নিজে চেষ্টা করলে সব করা সম্ভব । হস্ত রেখা সম্পর্কে যদি আরো জানার ইচ্ছা থাকে তাহলে কমেন্ট করে জানাবেন ।
আর পোস্টটি ভালো লাগলে সেয়ার করবেন । ধন্যবাদ ।
মেয়েদের হাত দেখার নিয়ম, হাত দেখা apps, হাত দেখে রাশি নির্ণয়, হস্তরেখা বিচার পদ্ধতি, হস্তরেখা বিচার পদ্ধতি pdf, মেয়েদের কোন হাত দেখা হয়, হাতের আয়ুরেখা, ছেলেদের কোন হাত দেখা হয়, হস্তরেখা বিচার পদ্ধতি pdf, সহজ হস্তরেখা বিচার, কিরোর হস্তরেখা বই pdf, কিরো বেনহাম, হস্তরেখা বিচার পদ্ধতি app, কিরো অমনিবাস, হাত দেখা, চিত্রসহ হস্তরেখা, মেয়েদের কোন হাতে বিবাহ রেখা থাকে, হস্তরেখা বিচার চাকরি, হাতের বিভিন্ন রেখার নাম, ছেলেদের হাতের রেখা দেখার নিয়ম, হস্তরেখা বিচার পদ্ধতি pdf, বা হাত, হাতের ভাগ্য রেখা বিচার, বিবাহ রেখা চেনার উপায়।