১০০ টি খনার বচন অর্থ সহ

খনা বা ক্ষণা কথিত আছে তার আসল নাম লীলাবতী। জ্যোতির্বিদ্যায় পারদর্শী এক বিদুষী নারী, যিনি বচন রচনার জন্যেই বেশি সমাদৃত, মূলত খনার ভবিষ্যতবাণীগুলোই খনা

খনা বা ক্ষণা কথিত আছে তার আসল নাম লীলাবতী। জ্যোতির্বিদ্যায় পারদর্শী এক বিদুষী নারী, যিনি বচন রচনার জন্যেই বেশি সমাদৃত, মূলত খনার ভবিষ্যতবাণীগুলোই খনার বচন নামে বহুল পরিচিত। আনুমানিক ৮ম থেকে ১২শ শতাব্দীর মধ্যে রচিত। খনা এবং মিহির দু'জনেই জ্যোতিষশাস্ত্রে দক্ষতা অর্জন করেন।



খনার ১০০টি বচন ও অর্থ জেনে নিনঃ- 


১। খনা ডাকিয়া কন ।

রোদে ধান ছায়ায় পান ।

অর্থঃ ধানে রোদ না পেলে ধান ভালো হবে না । এবং পান ছায়ায় ভালো হয় ।


২। এক অঘ্রানে ধান ।

তিন শাওনে পান ।।

অর্থঃ এক অগ্রহায়ণের মধ্যেই যতদূর সম্ভব ধান হয় । আর পান গাছ তিন শাওন গত হইলে ভাল রুপে জন্মায় ।


৩। কার্তিকের উনো জলে 

দুনো ধান খনা বলে ।

অর্থঃ কার্তিক মাসে যদি অল্প অল্প বৃষ্টি হয়, তাহা হইলে দ্বিগুণ ধান্য সেই বৎসরে উৎপন্ন হইয়া থাকে।

৪। অঘ্রানে পৌটি ।

পৌষে ছেউটি ।

মাঘে নাড়া ।

ফাল্গুনে ফাড়া ।

অর্থঃ ধান্য ষোল আনা লাভ হয় যদি অগ্রহায়ণ মাসে কর্তন করা যায়। পৌষে ছয় আনা লাভ, মাঘে খড় মাত্র (নাড়া) এবং ফাল্গুনে সমস্ত ধান নষ্ট হয়।


৫। শীষ দেখে বিষ দিন ।

কাটতে মাড়তে দশ দিন ।।

অর্থঃ ধান্যের শীর্ষ যেদিন বাহির হইবে, সেইদিন হইতে কুড়ি দিন পরে ধান্য কর্তন করিতে হইবে এবং তারপর থেকে দশদিনের মধ্যে ধান কেটে মাড়াই করিতে হইবে।


৬। শনি রাজা মঙল পাত্র ।

চষ খোঁড় কেবলমাত্র ।

অর্থঃ শনি রাজা ও মঙ্গল মন্ত্রী হইলে, উত্তমরূপে কৃষিকর্ম করিলেও, সেই বৎসর ভালরূপে ফসল জন্মায় না।


৭। বাপে ব্যাটায় চাষ চাই ।

তা অভাবে সহোদর ভাই ।

অর্থঃ চাষ পরের উপর নির্ভর করিয়া করিবে না। পিতা ও পুত্র একত্রে মিলিত হইয়া কৃষিকর্ম করাই প্রশস্ত। অন্যথায় সহোদর ভ্রাতার সহিত করা কর্তব্য।

৮। আগে বেঁধে দিবে আলি ।

তাতে রুইয়ে দিবে শালি ।।

তাতে যদি না হয় শালি ।

খনা বলে পারো গালি ।

অর্থঃ ধান্যক্ষেত্রে সর্বপ্রথম আলি বাঁধিয়া, শালি ধান্য রোপণ করিবে। তাহা হইলে ধান্য ভুরি পরিমাণে জন্মায়। ক্ষেত্রের আলি প্রতি বর্ষে উত্তমরূপে বন্ধন করা কর্তব্য।


৯। আষাঢ়ের পঞ্চ দিনে রোপয়ে যদি ধান ।

সুখে থাকে কৃষি বলে বাড়য়ে সন্মান ।।

অর্থঃ ধান্য রোপণাদি ক্রিয়া যদি আষাঢ়ের পঞ্চম দিবসের মধ্যে নিষ্পন্ন হয়, তাহা হইলে ধান্য জন্মে ভুরি পরিমাণে এবং কৃষকগণও সুখী হইয়া থাকে।


১০। আউশ ধানের চাষ 

লাগে তিন মাস ।

অর্থঃ আউশ ধান্য রোপণ ও কাটিবার সময়ের মধ্যে তিন মাস গত হইয়া থাকে।


১১। ভাদ্দরে চারি আশ্বিনে চারি ।

কালাই রোপ যত পারি ।

অর্থঃ কলাই রোপণের যোগ্য সময় জানিবে ভাদ্র মাসের শেষ চার দিন ও আশ্বিন মাসের প্রথম চার দিন, একুনে আট দিন।

১২। সরিষা বুনে কালাই মুগ ।

বুনে বেড়াও চাপড়ে বুক ।

অর্থঃ একই ক্ষেত্রে সরিষা ও কলাই অথবা সরিষা ও যুগ রোপণ করিলে, দুইটি ফসলই পাওয়া যায়। সেই কারণে কৃষকেরাও নিশ্চিন্তে ঘুরিয়া বেড়াইতে পারে।


১৩। আশ্বিনের ঊনিশ কার্তিকের ঊনিশ ।

বাদ দিয়ে যত পারিস মটর কালাই বুনিশ ।।

অর্থঃ আশ্বিনের শেষ ঊনিশ দিন ও কার্তিক মাসের প্রথম উনিশ দিন বাদ দিয়া মটর বুনিবে।


১৪। ফাল্গুনে আট চৈত্রের আট ।

সেই তিল দায়ে কাট ।

অর্থঃ তিল রোপণ করিতে হয় ফাল্গুনের শেষ আট দিন ও চৈত্রের শেষ আট দিনের মধ্যে, তাহা হইলেই তিল গাছ সতেজ হইয়া থাকে।


১৫। খনা বলে চাষার পো ।

শরতের শেষে সরিষা রো ।

অর্থঃ সরিষা বপন করিতে হয় শরৎ ঋতুর শেষভাগে।

১৬। সাত হাত তিন বিঘতে ।

কলা লাগাবে মায়ে পুতে ।

কলা লাগিয়ে না কাটবে পাত ।

তাতেই কাপড় তাতেই ভাত ।।

অর্থঃ কলার একটি বড় গাছ ও একটি তেউর (ছোট গাছ) সাত হাত অন্তর দূরে একত্রে রোপণ করিবে, গর্তের গভীরতা হইবে তিন বিঘৎ, ইহার পাতা কাটিবে না, তাহা হইলে ভাত কাপড়ের অভাব হইবে না।


১৭। যদি থাকে টাকা করিবার গো ।

চৈত্র মাসে ভুট্টা গিয়ে রো ।

অর্থঃ চৈত্রমাসে ভুট্টা রোপণ করিলে, ভুরি পরিমাণে ভুট্টা উৎপন্ন হয় ও তাহাতে প্রভূত অর্থাগম হইয়া থাকে।


১৮। দিনে রোদ রাত্রে জল ।

তাতে বাড়ে ধানের ফল ।

অর্থঃ বর্ষাকালে অধিকাংশ দিন যদি দিনের বেলায় রৌদ্র ও রাত্রে বৃষ্টি হয়, তাহা হইলে ধান্যের গাছ তেজযুক্ত হইয়া থাকে।


১৯। মানুষ মরে যাতে 

গাছলা সারে তাতে ।।

পচলা সরায় গাছলা সারে

গোধলা দিয়ে মানুষ মরে ।

অর্থঃ   মানুষের রোগ জন্মায় পচা গোবরের দুর্গন্ধে, কিন্তু তাহারই সাহায্যে উদ্ভিদ সকল বলবান ও সতেজ হইয়া থাকে।


২০। বৈশাখের প্রথম জলে ।

আশু দান দ্বিগুণ ফলে।

শুন ভাই খনা বলে ।

কার্তিকের তুলা অধিক ফলে ।

অর্থঃ বৈশাখ মাসের প্রথমে বৃষ্টি হইলে আউস ধান্য উত্তমরূপে জন্মায়, আর তুলা উৎপন্ন হয়। উৎকৃষ্ট রূপে যদি কার্তিক মাসে বৃষ্টি হয়।


২১। আউসের ভুই বেলে ।

পাটের ভুই এঁটেলে ।

অর্থঃ বেলে মাটিতে আউশ ধান্য উত্তমরূপে জন্মায়, আর এঁটেল মাটিতে ভালভাবে পাট উৎপন্ন হইয়া থাকে।

২২। কোদালে মান তিলে হাল ।

কাতেন ফাকায় মাঘে কাল ।

ছায়ে লাউ উঠানে ঝাল ।

কর বাপু চাষার ছাওয়াল ।

অর্থঃ মানকচু রোপণ করার সময় কোদাল দ্বারা জমি পাট করিতে হয়। লাঙ্গল দিয়া জমি পাট করিবে তিল বপনের সময়। ফাঁকা তিল (শ্বেত তিল) আশ্বিন ও কার্তিকে এবং কৃষ্ণতিল বপন করিবে মাঘ ও ফাল্গুনে। লাউ গাছ রোপণ করিবার সময় ভস্মের উপর পোঁতা প্রয়োজন, আর লঙ্কা অথবা মরিচ গাছ পুঁতিতে হইবে পরিষ্কৃত সুন্দর জমিতে।


২৩। ঘন সরিষা পাতলা রাই 

নেঙ্গে কাপাস যাই ।

কাপাস বলে কোষ্টা ভাই ।

জাতি পানি যেন না পাই ।

অর্থঃ সরিষা অপেক্ষা রাই পাতলা করিয়া বোনা প্রয়োজন। কার্পাস বৃক্ষ এইরূপ তফাৎ করিয়া রোপণ করিতে হইবে, যাহাতে কার্পাস তুলিতে হইলে ডিঙ্গাইয়া যাওয়া ও দণ্ডায়মান হইয়া তোলা সম্ভব হয়। একই ক্ষেত্রে কার্পাস ও পাট বুনিবে না, কারণ কার্পাস গাছে কোষ্টার জল লাগিলে নিস্তেজ হইয়া যায়৷


২৪। খাটে খাটায় লাভের গাঁতি ।

তাঁর অর্ধেক কাঁধে ছাতি ।

ঘরে বসে পুছে বাত । 

তাঁর ঘরে হা-ভাত

অর্থঃ যে ব্যক্তি কৃষকগণকে খাটাইতে ও স্বয়ং কৃষিতে পরিশ্রম করিতে অভ্যস্ত, সে পূর্ণ ফল লাভ করিতে সমর্থ হয়। যে ব্যক্তি নিজে পরিশ্রম করিতে না পারিলেও সকল সময়ই ছাতা মাথায় দিয়া জমিতে অবস্থান ও তত্ত্বাবধান করিয়া থাকে সে অর্ধেক লাভ প্রাপ্ত হয়। আর যে ব্যক্তি নিজেও পরিশ্রমে অপারগ ও তত্ত্বাবধান করিতেও অক্ষম তাহার ভাগ্যে অন্ন সংস্থান হওয়া দুরূহ।


২৫। যে বার গুটিকা পাত সাগর তীরেতে ।

সর্বদা মঙ্গল হয় কহে জ্যোতিষেতে ।।

নানা শস্যে পূর্ণ এই বসুন্ধরা হয় ।

খনা কহে মিহিরকে নাহিক সংশয় ।

অর্থঃ সমুদ্র তীরে যে বৎসর গুটিকাপাত হয়, ধরনী সেই বৎসর শস্যপূর্ণা হয় । 


২৬। বুধ রাজা আর শুক্র মন্ত্রী যদি হয় ।

শস্য হবে ক্ষেত্রভরা নাহিক শংসয় ।

অর্থঃ যে বৎসর বুধ রাজা ও শুক্র মন্ত্রী হয় সেই বৎসর পৃথিবী শস্য পরিপূর্ণ হয় ।


২৭। লাউ গাছে মাছের জল 

ধেনো মাটিতে বাড়ে ঝাল ।

অর্থঃ  লাউ গাছে যদি মাছের জল দেওয়া হয় ও মরিচ গাছের মূলে ধান্য পচা মাটি দেওয়া হয়, তাহা হইলে গাছ খুবই সতেজ হয়।


২৮। বাঁশবোনের ধারে বুনলে আলু ।

আলু হয় গাছ বেড়ালু ।

অর্থঃ বাঁশ বনের ধারে বড় আলু পোঁতা হইলে, গাছ সতেজ ও আলু বৃহদাকারের হইয়া থাকে।


২৯। চাল ভরা কুমড়া পাতা ।

লক্ষী বলেন আমি তথা ।

অর্থঃ লাউ কুমড়া গাছে যে গৃহের চাল ভর্তি থাকে। সেই গৃহে সচ্ছলতা সর্বদা বিরাজ করে।

৩০। শাওনের পান রাবনে না খায় ।

অর্থঃ শ্রাবণ মাসে পান রোপণ করা হইলে এত অধিক পরিমাণে পান জন্মায় যে রাক্ষসেও তাহা খাইয়া নিঃশেষ করিতে পারে না।


৩১। উঠান ভরা লাউ শশা ।

খনা বলে লক্ষীর দশা । 

অর্থঃ গৃহী মাত্রেরই নিজ নিজ বাটীতে লাউ শশা রোপণ করা কর্তব্য। যাহাদের বাটীতে তেমন জায়গা নাই, তাহাদের পক্ষে ইহা বাটীর উঠানে রোপণ করা উচিত।


৩২। ছায়ার ওলে চুলকায় মুখ ।

কিন্তু তাতে নাইকো দুখ। 

অর্থঃ রৌদ্র না পাইয়া যদি ছায়ার মধ্যে ওল জন্মায় তাহা হইলে মুখ চুলকায়। কিন্তু ওল বৃহৎ হইয়া থাকে।


৩৩। পটল বুনলে ফাল্গুনে ।

ফল বাড়ে দ্বিগুণে ।

অর্থঃ ফাল্গুন মাসে যদি পটল রোপণ করা হয়, তাহা হইলে পটল প্রচুর পরিমাণে উৎপন্ন হইয়া থাকে।


৩৪। নদীর ধারে পুতলে কচু ।

কচু হয় সাত হাত নীচু ।

অর্থঃ নদীর ধারে কচু গাছ রোপন করিলে তাহাতে অনেক পরিমান কচু হইয়া থাকে । 


৩৫। ভাদ্র আশ্বিনে না রুয়ে ঝাল ।

যে চাষা ঘুমায়ে কাটায় কাল ।

পরেতে কার্তিক অঘ্রান মাসে ।

বুড়ো গাছ ক্ষেতে পুতিয়ে আসে ।

সে গাছ মরিবে ধরিয়া ওলা ।

পুরতে হবে না ঝালের গোলা ।

অর্থঃ লঙ্কা অথবা মরিচের চারা যদি ভাদ্র বা আশ্বিনে জমিতে পোঁতা যায় তাহা হইলে প্রচুর পরিমাণে জন্মিয়া থাকে, আর কার্তিক অঘ্রাণে পুঁতিলে তেমন ফল পাওয়া যায় না বরং গাছে ওলা ধরে।


৩৬। ফাল্গুনে না রুলে ওল ।

শেষে হয় গণ্ডগোল ।

অর্থঃ ওল রোপণ করা কর্তব্য ফাল্গুন মাসে, অন্য মাসে রোপণ করিলে ওলের আকার ডিমের মতো ছোট হয়।

৩৭। কচু বনে যদি ছড়াস ছাই ।

খনা বলে তাঁর সংখ্যা নাই ।

অর্থঃ যদি কচুবনে ছাই ছড়াইয়া দেওয়া হয় তাহা হইলে পর্যাপ্ত পরিমাণে কচু জন্মিয়া থাকে।


৩৮। মূলার ভূই তুলা ।

ঈক্ষুর ভুই ধুলা ।

অর্থঃ মূলা যে জমিতে উৎপন্ন হইবে, তাহা পাট করিবে তুলার ন্যায়, আর ইক্ষুর জমিতে পাট করা কর্তব্য ধূলার ন্যায়।


৩৯। শোন রে মালী বলি তোরে 

কলম রো শাওনের ধারে ।

অর্থঃ শ্রাবন মাসে বৃষ্টি হইলে সেই সময় যদি কলমের চারা রোপণ করা হয় তাহা হইলে সে চারার মরিবার সম্ভবনা থাকে না ।


৪০। বৈশাখ জৈষ্ঠ্যেতে হলুদ রো ।

দাবা পাশা খেলা ফেলিয়া খো ।।

আষাঢ় শ্রাবণে নিড়ায়ে মাটি ।

ভাদরে নিড়ায়ে করহ খাটি।।

অন্য নিয়মে পুতিলে হলদি ।

পৃথীবী বলেন তাতে কি ফল দি ।

অর্থঃ বৈশাখ ও জ্যৈষ্ট মাসে যদি হলুদ রোপণ করিয়া আষাঢ় শ্রাবণ ও ভাদ্র মাসে বারম্বার জমি নিড়ান ও পরিষ্কার করা হয় । তাহা হইলে আশাতীত পরিমান হলুদ উৎপন্ন হইবে ।


৪১। ফাল্গুনে আগুন চৈত্রে মাটি ।

বাঁশ বলে শীঘ্র শীঘ্র উঠি ।।

অর্থঃ বাঁশ গাছের যে সব পাত্র শুখাইয়া মাটিতে পতিত হয় । সেগুলি সমস্ত একত্র করিয়া যদি ফাল্গুন মাসে দগ্ধ করা হয় এবং চৈত্র মাসে বাঁশের মূলে মাটি দেওয়া হয় । তাহা হইলে বাঁশ গাছ অচিরেই বৃদ্ধি প্রাপ্ত হইয়া থাকে ।

৪২। শুন রে বাপু চাষার ব্যাটা ।

বাঁশ ঝাড়ে দিও না ধানের চিটা ।।

চিটা দিলে বাঁশের গোড়ে ।

দুই কুড়া ভুই বেড়বে ঝাড়ে ।।

অর্থঃ বাঁশ ঝাড়ে যদি সার হিসাবে ধানের আগড়া দেওয়া যায় তাহা হইলে বাঁশ বৃদ্ধি হইবে কারণ উহাই বাঁশের পক্ষে উত্তম সার জানিও ।


৪৩। শুনরে বাপু চাষার ব্যাটা ।

মাটির মধ্যে বেলে যেটা ।

তাতে যদি বুনিস পটল ।

তাতেই তোর আশার সফল ।

অর্থঃ বেলে মাটিতে পটল রোপণ করা হইলে পটল উৎপন্ন হয় প্রচুর পরিমানে ।


৪৪। খনা বলে শুন শুন ।

শরতের শেষে মূলা বুন ।

তামাক বুনে গুড়িয়ে মাটি । 

বীজ পুঁতো গুটি গুটি ।।

ঘন রূপে পুঁতো না ।

পৌষের অধিক রেখ না ।

অর্থঃ মূলা বুনা কর্তব্য শরৎকালের শেষে । তামাক রোপণ করার জন্য জমির মাটি ধুলার ন্যায় গুড়া করিয়া ভালরূপে পাট করিবে । খুব ঘন ঘন করিয়া তামাকের গাছ লাগাইবে না আর পৌষ মাসের মধ্যেই তামাক কাটিয়া লইবে ।


৪৫। বলে গেছে বরাহের পো ।

দশটি মাস বেগুন রো ।।

চৈত্র বৈশাখ দিবে বাদ ।

ইথে নাই কোন বিবাদ ।।

পোকা ধরিলে দিবে ছাই । 

এর চেয়ে ভাল উপায় নাই ।

মাটি শুখাইলে দিবে জল ।

সকল মাসে পাবে ফল ।।

অর্থঃ চৈত্র ও বৈশাখ ব্যাতীত বেগুনের চারা অন্যান্য মাসে পুতিবে । বেগুন গাছে পোকা ধরিলে তাহাতে ছাই দেওয়া প্রয়োজন ও মাটি শুকাইয়া যাইলে জল দিতে হইবে । এই নিয়ম মানিয়া চলিলে সারা বছর বেগুন জন্মিয়া থাকে ।


৪৬। যদি না হয় অঘ্রাণে বৃষ্টি ।

তবে না হয় কাঠালের সৃষ্টি ।।

অর্থঃ অগ্রহায়ণ মাসে বৃষ্টি না হইলে উত্তম্রূপে কাঠাল জন্মায় না ।


৪৭। এক পুরুষে রোপে তাল ।

অন্য পুরুষে করে পাল ।।

অপর পুরুষে ভুঞ্জে তাল ।।

অর্থঃ তালগাছের কাঠের সার হইতে অত্যাধিক  বিলম্ব হইয়া থাকে, সেই হেতু তিন পুরুষ না গত হইলে কাঠ ব্যাবহার করা সম্ভব হয় না ।

৪৮। হাত বিশে করি ফাক ।

আমা কাঠল পুতে রাখ ।।

গাছ গাছালি ঘন সবে না ।

গাছ হবে তাঁর ফল হবে না ।

অর্থঃ আম ও কাঁঠাল বৃক্ষ বিশ হাত অন্তর অন্তর রোপণ করা কর্তব্য । ঘন ঘন ভাবে পুতিলে উত্তম ফল জম্নায় না ।


৪৯। বারো বছরে ফলে তাল ।

যদি না লাগে গরুর নাল ।।

অর্থঃ তালের চারা গরু যদি ভক্ষন না করিয়া ফেলে তাহা হইলে ফলন বারো বৎসরের কমে হইবে না ।


৫০। নলে কান্তর গজেক বাই ।

কলা রুয়ে খেয়ো তাই ।।

কলা রুয়ে না কেটো পাত ।

তাতেই কাপড় তাতেই ভাত ।।

অর্থঃ কদলী বৃক্ষ রোপণ করিবে আট হাত অথবা এক ব্যাম এক গজ ফাক ফাক করিয়া । তাহার পাতা না কাটিলে অন্ন বস্ত্রের উপায় হইবে । কারণ বৃক্ষ সতেজ হইয়া পর্যাপ্ত পরিমান কদলী জন্মিবে ।


৫১। ফাল্গুনে এটে ।

পোঁত কেটে ।।

বেড়ে যাবে ঝাড় কি ঝাড় ।

কলা বইতে ভাঙবে ঘাড় ।

অর্থঃ কলার এঁটে কাটিয়া ফাল্গুনে মাসে পোতা হইলে অচিরে ঝাড় বৃদ্ধি হইয়া প্রচুর পরিমানে কলা জন্মায় ।


৫২। ডাক ছেড়ে বলে রাবণ ।

কলা লাগাবে আষাঢ় শ্রাবন ।

তিনশত ষাঢ় ঝাড় কলা রুয়ে ।

থাক গৃহী ঘরে শুয়ে ।।

কলা রুয়ে না কাট পাত ।

তাতেই কাপড় তাতেই ভাত ।

অর্থঃ কদলী বৃক্ষ রোপণ করা কর্তব্য আষাঢ় ও শ্রাবন মাসে । কদলী তিন শতষাট ঝাড় রোপণ করিবার পর গৃহী নিশ্চিন্তে ঘরে গিয়ে বিশ্রাম করিতে পারে । কিন্তু পাতা কাটা চলিবা না । তাহা হইলে অন্ন বস্ত্রের সংস্থান ইহার দ্বারাই হইবে । 

৫৩। ডাক দিয়ে বলে রাবণ ।

কলা লাগাবে আষাঢ় শ্রাবণ ।

রুবি বটে খাবিনে ।

কলা তলে যাবিনে ।

গেলে যাবে ভুয়ে । কলা পড়বে শুয়ে ।। 

অর্থঃ অনেকে বলিয়া থাকেন যে কদলী রোপণ করা আষাঢ় ও শ্রাবণ মাসে প্রশস্ত নহে । করন পুতিলে পোকার আক্রমন হয় ।


৫৪। এক হাত এক মুট কলা পোত ।

তবে দেখবে কলার গোট ।

অর্থঃ কদলী বৃক্ষ যদি সওয়া একহাত গভীর গর্ত খনন করিয়া রোপণ করা হয় তাহা হইলে বৃহদাকারে কদলী জন্মিয়া থাকে ।


৫৫। সিংহ মীন বর্জ্জে ।

কলা কাবে আজ্যে ।

অর্থঃ কদলী বৃক্ষ ভাদ্র ও চৈত্র মাস বাদ দিয়া অন্যান্য মাসে রোপণ করিতে হয়।


৫৬। যদি রোয় ফাল্গুনে কলা।

তবে হয় মাস সঞ্চলা ।


অর্থঃ ফাল্গুন মাসে কলাগাছ পুঁতিলে বহু ঝাড় হইবে, তাহা হইতে প্রতি মাসেই কলা ফলিতে থাকিবে।


৫৭। ভাদ্র মাসে রুয়ে কলা।

সবংশে মোরো রাবণ শালা ॥


অর্থঃ ভাদ্র মাসে কদলী বৃক্ষ রোপণ করিয়া রাবণ সবংশে নিহত হয়, সেই কারণে ওই মাসে অনেকে কদলী বৃক্ষ রোপণ করিতে মানা করেন।


৫৮। আগে পুঁতে কলা।

বাগ বাগিচে ফলা ।

শোন রে বলি চাষার পো। 

পরে নারিকেল ক্রমে গুয়ো ।

নারিকেল বারো সুপারী আট।

এর ঘন তখনি কাট।

অর্থঃ বাগান করিলে প্রথমে কলা ও পরে নারিকেল গাছ পুঁতিকে। নারিকেল গাছ বৃহৎ হইলে মাঝে মাঝে সুপারী গাছ বসাইবে। নারিকেল বার হাত অন্তর ও সুপারী গাছ আট হাত অন্তর বসাইতে হয়।

৫৯। গো নারিকেল নেড়ে পো।

আম টুটুরে কাঁঠাল ভো॥


অর্থঃ নারিকেল চারা ও সুপারী চারা যদি নাড়িয়া পোঁতা হয়, তাহা হইলে গাছ তেজযুক্ত হয় ও ফল অধিক জন্মায়। আবার আমের চারা নাড়িয়া পোঁতা হইলে আম হয় ছোট আর কাঁঠাল চারা নাড়িয়া পুঁতিলে তাহা ভো হয় অর্থাৎ তাহাতে কোষ জন্মে না।


৬০। আট চার গুয়ো।

আম নাড়ায় টুকটুকী কাঠাল নাড়ায় ভুও ।

সিত নাড়ায় গুয়ও ।

দুয়ো দুয়ো তিনে খাটি আগে বাট কুও ।


অর্থঃ সুপারী বৃক্ষ বসাইবে আট হাত ব্যবধানে, সেই গাছে ফল হইলে মাঝে মাঝে আর একটি করিয়া বসাইলে এক একটি গাছ চারি হাত অন্তর হইবে। আমের চারা নাড়িয়া পুঁতিলে ফল হয়। ছোট ও কাঠাল চারা নাড়িয়া পুঁতিলে তাহা ভূও হয়। সুপারী গাছ তিনবার নাড়িয়া পোঁতা কর্তব্য। প্রথমে পুঁতিবে গর্ত খুঁড়িয়া, পরে চারার উদ্গম হইলে তুলিয়া পুঁতিতে হইবে। ইহার পর পুনরায় তুলিয়া অন্যত্র পুতিতে হয়।

৬১। গোয়ে গোবরে বাঁশে মাটি।

অ-ফলা নারিকেলের শিকড় কাটি।

ওলে কুটি মানে ছাই।

এইরূপ কৃষি করবে ভাই ॥


অর্থঃ সুপারী গাছের গোড়ায় গোবর ও বাঁশের গোড়ায় মাটি দিবে। যে নারিকেল গাছে ফল ধরে না, তাহার কতকগুলি শিকড় কাটিয়া দিলে ফল হইয়া থাকে, ওলের গোড়ায় খড়কুটা দিলে শুল বড় হয়, মানের গোড়ায় ছাই সার দেওয়াই নিয়ম।


৬২। নারিকেল গাছে দিলে নুনে মাটি। 

শীঘ্র শীঘ্র বাঁধে গুটী ।

অর্থঃ নারিকেল গাছের গোড়ায় লবণ মিশ্রিত মাটি দিলে উহাতে শীঘ্র ফল হয়।


৬৩। খনায় ডাকিয়া বলে।

চিটা দিলে নারিকেল মূলে॥

গাছ হয় তাজা মোটা।

শীঘ্র শীঘ্র ধরে গোটা ॥

অর্থঃ নারিকেল গাছের গোড়ায় ধানের আগড়া দেওয়া প্রয়োজন। তাহা হইলে গাছ শক্তিযুক্ত ও সতেজ হইয়া থাকে।


৬৪। শোন ওরে চাষার পো। 

সুপারী বাগে মান্দার রো॥ 

মান্দারপাতা পল্পে গোড়ে। 

ফল বাড়ে ঝটপট করে॥

অর্থঃ সুপারীর বাগানে যদি মান্দার গাছ বসানো হয়, তাহা হইলে উহার পাতা পড়িয়া সার বৃদ্ধি হয় এবং সুপারী গাছ অতিশয় তেজস্বী হইয়া সুফলা হইয়া থাকে।

৬৫। হাতে হাতে ছোঁয় না।

মরা ঝাটি বয় না।

খনা বলে যখন যায়। 

তখন কেন লয় না ।

অর্থঃ নারিকেল গাছ এরূপভাবে পুঁতিতে হয়, যাতে এক গাছের পাতা অন্য গাছ স্পর্শ না করে, “মরা ঝাটি বয়না” অর্থাৎ নারিকেল গাছ শুদ্ধ বাখরা সহ্য করিতে পারে না। বাখরা শুকাইলেই কাটিয়া পরিষ্কার করিয়া দিতে হয়।


সমাপ্ত

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন