স্বপ্নদোষ হলো একটি সাধারণ যৌন সমস্যা যা সমস্ত বয়সের পুরুষদের মধ্যে দেখা যায়।
এটি সাধারণত ঘুমের একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ে ঘটে যেখানে শরীরের যৌন অঙ্গগুলি খুব
বেশি উত্তেজিত হয়ে যায় এবং বীর্যপাত ঘটে।
স্বপ্নদোষের অনেক কারণ রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছেঃ
যৌন উত্তেজনাঃ স্বপ্নদোষের সবচেয়ে সাধারণ কারণ হলো যৌন উত্তেজনা। এটি
শারীরিক বা মানসিক কারণে হতে পারে।
অতিরিক্ত হরমোনঃ স্বপ্নদোষের অন্য একটি কারণ হলো অতিরিক্ত হরমোন। এটি
সাধারণত বয়ঃসন্ধিকালে ঘটে।
ঘুমের সমস্যাঃ ঘুমের সমস্যাও স্বপ্নদোষের কারণ হতে পারে। এটি ঘুমের
অনিদ্রা, ঘুমের apnea বা narcolepsy এর কারণে হতে পারে।
ঔষধঃ কিছু ঔষধও স্বপ্নদোষের কারণ হতে পারে। এগুলির মধ্যে রয়েছে
অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট, অ্যান্টিসাইকোটিক এবং স্টেরয়েড।
মানসিক চাপঃ মানসিক চাপও স্বপ্নদোষের কারণ হতে পারে। এটি পরীক্ষা, চাকরি
বা সম্পর্কের কারণে হতে পারে।
স্বপ্নদোষ সাধারণত কোনও গুরুতর সমস্যা নয়। তবে, যদি এটি খুব ঘন ঘন হয় বা যদি
এটি আপনাকে অস্বস্তি দেয় তবে আপনি আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলতে পারেন।
ঘন ঘন স্বপ্নদোষ বন্ধ করার ৯টি উপায়
ঘন ঘন স্বপ্নদোষ বন্ধ করার জন্য আপনি নিচের ৯ টি নিয়ম ফলো করে দেখতে
পারেন আপনার স্বপ্নদোষ বন্ধ হয়ে যাবেঃ-
১। নিয়মিত ঘুমের অভ্যাস গড়ে তুলুন। প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যান এবং ঘুম
থেকে ওঠুন, এমনকি ছুটির দিনেও। এটি আপনার শরীরকে ঘুমের একটি নিয়মিত চক্র তৈরি
করতে সাহায্য করবে।
২। ঘুমাতে যাওয়ার আগে ক্যাফেইন এবং অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন। এই পদার্থগুলি
ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে এবং স্বপ্নদোষের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলতে পারে।
৩। ঘুমাতে যাওয়ার আগে একটি শান্ত এবং আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি করুন। ঘরে
অন্ধকার, শান্ত এবং ঠান্ডা রাখুন। ঘুমাতে যাওয়ার আগে কিছুটা হালকা ব্যায়াম
করুন, তবে খুব বেশি ব্যায়াম করবেন না।
৪। ঘুমাতে যাওয়ার আগে ভারী খাবার খাবেন না। ভারী খাবার খেলে ঘুমাতে অসুবিধা
হতে পারে।
৫। ঘুমাতে যাওয়ার আগে দুশ্চিন্তা এড়িয়ে চলুন। যদি আপনি দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হন,
তাহলে ঘুমাতে যাওয়ার আগে কিছুটা সময় ধ্যান বা যোগব্যায়াম করুন।
৬। আপনার ঘুমের ঘরে টেলিভিশন বা কম্পিউটার রাখবেন না। টেলিভিশন এবং কম্পিউটারের
স্ক্রিন থেকে নির্গত আলো ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
৭। আপনার ঘুমের ঘরে ঘড়ি রাখবেন না। ঘড়ি দেখে আপনি যদি ঘুমাতে দেরি করেন,
তাহলে আপনি আরও বেশি দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়তে পারেন।
৮। আপনি যদি ঘুম থেকে জেগে উঠে স্বপ্ন দেখেন, তাহলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আবার
ঘুমিয়ে পড়ুন। যদি আপনি স্বপ্ন দেখে জেগে উঠে দীর্ঘক্ষণ জেগে থাকেন, তাহলে
আপনি আরও বেশি দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়তে পারেন।
৯। আপনি যদি ঘন ঘন স্বপ্নদোষ দেখেন, তাহলে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলুন। ঘন
ঘন স্বপ্নদোষের কিছু নির্দিষ্ট চিকিৎসা রয়েছে।
অতিরিক্ত স্বপ্নদোষ হলে কি সমস্যা হয়
স্বপ্নদোষ হল একটি সাধারণ যৌন ঘটনা যা প্রায়শই বয়ঃসন্ধিকালে ঘটে। এটি তখন
ঘটে যখন ঘুমের সময় যৌন উত্তেজনা বৃদ্ধি পায় এবং এর ফলে বীর্যপাত হয়।
স্বপ্নদোষের কারণে কোনও শারীরিক সমস্যা হয় না। তবে, এটি মানসিকভাবে বিব্রতকর
হতে পারে। যদি আপনি স্বপ্নদোষের কারণে অস্বস্তি বোধ করেন, তাহলে আপনি একজন
ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে পারেন।
স্বপ্নদোষ বন্ধ করার ঘরোয়া উপায়
স্বপ্নদোষ বন্ধ করার জন্য কিছু ঘরোয়া উপায় রয়েছে। এগুলি হলঃ
- নিয়মিত ব্যায়াম করুনঃ ব্যায়াম শরীরের হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। এটি স্বপ্নদোষের ঝুঁকি কমাতে পারে।
- পর্যাপ্ত ঘুমানঃ ঘুমের অভাব স্বপ্নদোষের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই প্রতিদিন রাতে কমপক্ষে ৭-৮ ঘন্টা ঘুমান।
- স্বাস্থ্যকর খাবার খানঃ স্বাস্থ্যকর খাবার খেলে শরীরের হরমোনের ভারসাম্য বজায় থাকে। এটি স্বপ্নদোষের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
- তৈলাক্ত খাবার, অ্যালকোহল এবং ক্যাফিন এড়িয়ে চলুনঃ তৈলাক্ত খাবার, অ্যালকোহল এবং ক্যাফিন স্বপ্নদোষের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই এগুলি এড়িয়ে চলুন।
- নিয়মিত শ্বাস ব্যায়াম করুনঃ শ্বাস ব্যায়াম শরীরের অক্সিজেন সরবরাহ বৃদ্ধি করে। এটি স্বপ্নদোষের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
- নিয়মিত যোগব্যায়াম করুনঃ যোগব্যায়াম শরীর এবং মনকে শান্ত করে। এটি স্বপ্নদোষের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
- স্বপ্নদোষের বিষয়ে চিন্তা করবেন নাঃ স্বপ্নদোষের বিষয়ে চিন্তা করলে তা আরও বেশি হতে পারে। তাই স্বপ্নদোষের বিষয়ে চিন্তা না করাই ভাল।
যদি আপনি স্বপ্নদোষের সমস্যায় ভুগছেন, তাহলে উপরের ঘরোয়া উপায়গুলি চেষ্টা
করে দেখুন। যদি সমস্যাটি না কমে তাহলে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
স্বপ্নদোষ বন্ধ করার খাবার
স্বপ্নদোষ বন্ধ করার জন্য কিছু খাবার খেতে পারেন। এগুলি হলঃ
ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবারঃ ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
বাড়ায়। এটি স্বপ্নদোষের ঝুঁকি কমাতে পারে। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবারগুলি হলঃ
- আম
- লেবু
- কমলা
- আপেল
- ব্রকলি
- টমেটো
ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবারঃ ম্যাগনেসিয়াম শরীরের হরমোনের
ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। এটি স্বপ্নদোষের ঝুঁকি কমাতে পারে।
ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবারগুলি হলঃ
- বাদাম
- বীজ
- শাকসবজি
- ফল
- সামুদ্রিক খাবার
জিঙ্ক সমৃদ্ধ খাবারঃ জিঙ্ক শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
এটি স্বপ্নদোষের ঝুঁকি কমাতে পারে। জিঙ্ক সমৃদ্ধ খাবারগুলি হলঃ
- মাংস
- মাছ
- ডিম
- দুগ্ধজাত খাবার
- বাদাম
- বীজ
যদি আপনি স্বপ্নদোষের সমস্যায় ভুগছেন, তাহলে উপরের খাবারগুলি খেতে পারেন।
এগুলি স্বপ্নদোষের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে। তবে, যদি সমস্যাটি না কমে
তাহলে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
স্বপ্নদোষ বন্ধ করার উপায় দোয়া
স্বপ্নদোষ বন্ধ করার জন্য আপনি নিম্নলিখিত দোয়াটি পড়তে পারেনঃ
"আল্লাহুম্মা ইন্নী আউযু বিকা মিনাল হারাম ওয়ালমোহতারাম
ওয়ালমাউয়ুকালা।"
অর্থ: "হে আল্লাহ, আমি তোমার কাছে হারাম, অশ্লীল এবং নোংরা স্বপ্ন থেকে আশ্রয়
চাই।"
এই দোয়াটি আপনি প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে পড়তে পারেন। এটি আপনাকে
স্বপ্নদোষ থেকে বাঁচতে সাহায্য করবে।